"মসনবী শরীফ (১ম হইতে ৫ম খন্ড একত্রে)" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: মসনবী বা মসনবী-ই মা'নবী (ফার্সি: مثنوی معنوی) হল জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি রচিত একটি বিখ্যাত ফার্সি সুফী কবিতা। সুফিবাদের উপর রচিত এটি সবচেয়ে বিখ্যাত ও প্রভাবশালী রচনার মধ্যে একটি। মসনবী ছয়টি কবিতার বইয়ের সংকলন। এই আধ্যাত্মিক ধাঁচের লেখনীটি কীভাবে ঈশ্বরের সাথে প্রেমের লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় তার শিক্ষা দেয়। এতে কুরআন ও আধ্যাত্মিক জীবন সম্পর্কিত রুমির গভীর উপলব্ধির বর্ণনা রয়েছে। মসনবীকে প্রায়ই 'ফার্সি কুরআন' বলে অভিহিত করা হয়। মসনবী-ই মা'নবী (ফার্সি: مثنوی معنوی) শিরোনামটির অর্থ হল 'আধ্যাত্মিক শ্লোক'। মসনবী হল কোরআন, হাদিস ও প্রাত্যহিক ঘটনা থেকে নেওয়া সংক্ষিপ্ত কাহিনী বা গল্প। গল্পগুলো একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে বর্ণনা করা হয়েছে এবং সবগুলো নীতিকথা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন রকমের ইসলামি জ্ঞানের সমাহার রয়েছে, কিন্তু প্রাথমিক দৃষ্টিকোণ থেকে এতে ব্যক্তিগত সুফিবাদকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। রুমির দিওয়ান বইয়ের সাথে তুলনা করলে এটি তুলনামূলকভাবে পরিমিত মাত্রা মেনে চলে। এতে আধ্যাত্মিক জীবনের বিভিন্ন দিক এবং সুফিবাদের শিষ্যত্ব গ্রহণকারী বা যারা জীবনের অর্থ খুঁজে বেড়াচ্ছেন তাদের অনুশীলন সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে।
জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি (ফার্সি: جلالالدین محمد رومی; ৩০ সেপ্টেম্বর ১২০৭ – ১৭ ডিসেম্বর ১২৭৩), যিনি জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বালখী, মাওলানা রুমি, মৌলভি রুমি নামে তবে শুধু মাত্র রুমি নামেও পরিচিত, ১৩শ শতাব্দীর একজন ফার্সি[৭][৮] সুন্নি[৯] মুসলিম কবি, আইনজ্ঞ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রিয়বাদী এবং সুফী ছিলেন।[১০] রুমির প্রভাব দেশের সীমানা এবং জাতিগত পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে বিশ্বদরবারে ছড়িয়ে পড়েছে; ফার্সি, তাজাকিস্তানি, তুর্কি, গ্রিক, পশতুন, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানরা বিগত সাত শতক ধরে বেশ ভালভাবেই তার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে যথাযথভাবে সমাদৃত করে আসছে।[১১] তার কবিতা সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বিভিন্ন ধারায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। রুমিকে যুক্তরাষ্ট্রের “সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি” [১২] এবং “সর্বাধিক বিক্রীত কবি” হিসেবে উল্লেখ করা হয়।[১৩][১৪] রুমির সাহিত্যকর্ম বেশিরভাগই ফার্সি ভাষায় রচিত হলেও তিনি অনেক স্তবক তুর্কি, আরবি এবং গ্রিক ভাষায়ও[১৫][১৬][১৭] রচনা করেছেন। [১৮][১৯] তার লেখা মসনবী-কে ফার্সি ভাষায় লেখা সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হয়।[২০][২১] বৃহত্তর ইরান এবং বিশ্বের ফার্সি ভাষী জনগোষ্ঠী এখনও তার লেখাগুলো মূল ভাষায় ব্যাপকভাবে পড়ে থাকে।[২২][২৩] অনুবাদসমূহও খুব জনপ্রিয়, বিশেষ করে তুরস্ক, আজারবাইজান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ এশিয়ায়।[২৪] তার কবিতা ফার্সি সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে, শুধু তাই নয় তুর্কি সাহিত্য, উসমানীয় তুর্কি সাহিত্য, আজারবাইজানি সাহিত্য, পাঞ্জাবের কবিতা, হিন্দী সাহিত্য, উর্দু সাহিত্যকেও অনেক প্রভাবিত করেছে। এছাড়াও অন্যান্য ভাষার সাহিত্য যেমন তুর্কীয়, ইরানীয়, ইন্দো-আর্য, চাগাতাই, পশতু এবং বাংলা সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে। তার জীবনদর্শনের উপর শিবলী নোমানীর রচিত সাওয়ানেহে মাওলানা রূম অন্যতম। নাম