"রাষ্ট্রদ্রোহিতা" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ আইনের সফল এবং সার্থক ব্যাখ্যা করিবার পূর্ণ অধিকার একমাত্র সুপ্রীম কোর্টের। সুপ্রীম কোর্ট আইনের যে ব্যাখ্যা দিবে তাহা সকলেই মানিতে বাধ্য; ইহাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের নির্দেশ। ১৯৪৭ (আগস্ট) হইতে ১৯৭১ (মার্চ) পর্যন্ত পাকিস্তানের সকল হাইকোর্ট আইনের যে ব্যাখ্যা দিয়াছে তাহা আমরা মানিতে বাধ্য। ভারতের উচ্চাদালতসমূহ আইনের যে ব্যাখ্যা দিয়াছে তাহা আমরা শ্রদ্ধার সহিত গ্রহণ করি। রাষ্ট্রদ্রোহিতা বিষয়ে উপমহাদেশের উচ্চাদালতগুলিতে যেই সমস্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হইয়াছে তাহা এই পুস্তকে রেফারেন্স-এর সহিত পরিবেশন করিয়াছি। এই বিষয়ের আইনকে বুঝিবার জন্য উচ্চাদালতসমূহের সিদ্ধান্তের আশ্রয় নেওয়া একমাত্র বাঞ্ছনীয় পন্থা। ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা আইনের দৃষ্টিতে অল্প মূল্য বহন করে। উচ্চাদালতের সিদ্ধান্তকে আইনের ভাষায় নজির বলা হয়। ঐ নজিরগুলি আইনবিষয়ক পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়। বলাবাহুল্য, নজির ইংরেজি ভাষায় লিখিত। আমি সেগুলি অনুবাদ করিয়াছি; তবে অনুবাদ আক্ষরিক নয়। রাষ্ট্রদ্রোহিতা একটি জটিল এবং কঠিন বিষয়। ব্যাখ্যার মাধ্যমে ইহার জটিলতা কমিয়া আসিতেছে। ইংরেজ আমলে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলিতে যাহা বুঝাইত, তাহা নিতান্তই নিষ্ঠুর ছিল। পাকিস্তান আমলে তাহার ধার কমিয়া আসিতে থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হইবার পর এই ক্ষেত্রে ঔদার্য পরিলক্ষিত হইবে ইহাই কাম্য। এই পুস্তিকা প্রকৃতপক্ষে আমার দণ্ডবিধির ভাষ্য নামক বৃহদাকার পুস্তক হইতে সংকলিত।
গাজী শামছুর রহমান (১৯২১ - ১৯৯৮) একজন স্বনামধন্য বাংলাদেশী আইনবিদ ও আইন সংস্কারক, বিচারক, ভাষাবিদ এবং টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলায় আইন বিষয়ক গ্রন্থ রচনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তার রচিত গ্রন্থ সংখ্যা শতাধিক। তিনি ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক-এ ভূষিত হন। ১৯২১ সালে বাংলাদেশের খুলনা জেলার ডুমুরিয়ার চুকনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে এলএলবি ও এলএলএম পাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর জেলা জজ হিসেবে যোগদান করেন। সরকারের যুগ্ম সচিব হিসেবে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এছাড়া বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট ও বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন কিছুদিন। বরিশাল জেলার চাখারের বেগম জামাল আরা রহমানকে বিয়ে করেন। বেগম জামাল সম্ভ্রান্ত পরিবারের উচ্চশিক্ষিত বিদুষী মহিলা। তাদের সন্তান আইনুন নিশাত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন, বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।