ভূমিকা শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গনের মধ্যে যে স্বাধীন বাংলাদেশে বিশেষভাবে প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে সে-বিষয়ে মতদ্বৈধতার অবকাশ নেই। অনেক নতুন নাটক লিখিত ও মঞ্চস্থ হয়েছে, হয়ে চলেছে। বহু নাট্যগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে, রাজধানী ঢাকায় তো বটেই, অন্যত্রও। প্রায়ই নাটকের উপর নানা আলোচনাচক্র ও কর্মশালাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তদুপরি এখন দেশের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে নাট্যকলা বিষয়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাদানের কাজ চলছে। তবে এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আশানুরূপ উদ্যোগ এখনো গৃহীত হয়নি। নাট্যকলার ছাত্রশিক্ষক কর্তৃক, অর্থপূর্ণভাবে ব্যবহারযোগ্য, নাট্যকলা বিষয়ক তত্ত্ব ও তথ্যসমৃদ্ধ উন্নতমানের গ্রন্থাদি আমাদের এখানে বাংলা ভাষঅয়, এখন অবধি, খুব কম রচিত হয়েছে। একেবারে যে হয়নি তা নয়, তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা নিত্যন্ত অপ্রতুল। তার জন্য এখনো আমাদের প্রতিনিয়ত ইংওরেজি ভাষায় রচিত গ্রন্থাদির শরণাপন্ন হতে হয়। যে আদর্শ, প্রেরণা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার পটভূমিতে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয় ঘটেছিল, তার সঙ্গে এ অবস্থা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। জিয়া হায়দার আমাদের এ অবস্থা থেকে কিছুটা মুক্তিদানের লক্ষ্যে গত কয়েক বছর থেকে একটা উল্লেখযোগ্য কাজ করে চলেছেন। তাঁর থিয়েটারের কথা (দ্বিতীয় খণ্ড) সেই পরিচয়ই বহন করে।
থিয়েটারের কথা (প্রথম খণ্ড) প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৯৫ সালে। ওই গ্রন্থে লেখক প্রাচীন যুগের গ্রিক ও রোমান থিয়েটার ও প্রাচ্যের নানা দেশের থিয়েটার, যেমন ভারতীয়, জাপানী, চীনা থিয়েটার নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা করেছেন। বর্তশান গ্রন্থ তথা থিয়েটারের কথা (দ্বিতীয় খণ্ড)-তে আলোচিত হয়েছে মধ্যযুগের থিয়েটার ও রেনেসাঁ যুগের থিয়েটার। শেষের বিষয়টি আলোচনার সময় লেখক ইতালি, ইংল্যান্ড, স্পেন ও ফ্রান্সের রেনেসাঁর যুগের থিয়েটার সম্পর্কে নানা প্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়েছেন, তার উপর আকর্ষণীয় আলোকপাত করেছেন। প্রথম খণ্ডের মতো এই গ্রন্থেও আলোচনা গড়ে উঠেছে ফিজিক্যাল থিয়েটারকে কেন্দ্র করে। মঞ্চ, মঞ্চোপকরণ, যেমন দৃশ্যপট, আলোক-ব্যবস্থা, পোশাক-পরিচ্ছদ, মেপ-আপ, নাট্যগোষ্ঠী অভিনয়রীতি ইত্যাদি মধ্যযুগের ও ইউরোপীয় রেনেসাঁর সময় কেমন ছিল, সে-সম্পর্কে এই বই পাঠককে একটি চমৎকার ধারণা দেয়। ওই সময়কার নাট্য-সাহিত্য সম্পর্কে আমাদের কারো কারো একটা মোটামুটি ধারণা থাকলেও বর্তমান গ্রন্থে আলোচিত মঞ্চ সম্পর্কিত বিষয়গুলি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান খুবই সীমিত। জিয়া হায়দার রচিত থিয়েটারের কথা (দ্বিতীয় খন্ড) আমাদের এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
গ্রন্থটিতে বিষয়বস্তু সুবিন্যস্ত, লেখকের ভাষা প্রাঞ্জল, কৃত্রিম বৈদগ্ধ্যের বাতাবরণমুক্ত, যদিও প্রজ্ঞার স্বাক্ষর সহজেই বহুস্থানে চোখে পড়ে। থিয়েটারের কথা (দ্বিতীয় খণ্ড) প্রাতিষ্ঠানিক ছাত্রছাত্রীসহ নাট্যকলার উৎসাহী সকল ব্যক্তি কর্তৃক একটি প্রয়োজনীয় গ্রন্থরূপে আদৃত হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
কবীর চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সূচিপত্র * মধ্যযুগের থিয়েটার * রেনেসাঁ যুগের থিয়েটার : ইটালি * রেনেসাঁ যুগের থিয়েটার : ইংল্যান্ড * রেনেসাঁ যুগের থিয়েটার : স্পেন * রেনেসাঁ যুগের থিয়েটার : ফ্রান্স