বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন মুক্তিযােদ্ধার অসাধারণ স্মৃতিকথা এ বই। যুদ্ধ শুরুর সময় তিনি ছিলেন তৎকালীন ইপিআর-এর একজন সিগন্যাল কর্মী। তাঁর কর্মস্থল ছিল সেক্টর হেডকোয়ার্টার রাজশাহী। সেই অবস্থান থেকে কোনাে ঘােষণা বা নির্দেশনার অপেক্ষা করেই শুধু দেশপ্রেমের প্রেরণায় তিনি মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। ইপিআর সিগন্যাল বেতারের মাধ্যমে রাজশাহী সেক্টরের রাইফেলস বাহিনীর সদস্যদের প্রথম মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেন। সেক্টর হেডকোয়ার্টারের অস্ত্রাগার ভেঙে অস্ত্রগােলাবারুদ দখল করতে নেতৃত্ব দেন। রাজশাহী পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের পাকিস্তানি হামলা সম্পর্কে সতর্ক করে প্রতিরােধের আহ্বান জানান। যখন ক্যাপ্টেন গিয়াস (অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, বীরবিক্রম, পিএসসি) নওগাঁ থেকে রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টের পাকিস্তানি ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্টকে রুখতে শহর উপকণ্ঠে আসেন, লেখক তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে মৃত্যুকে তুচ্ছ করে ইপিআর সেক্টরের সমস্ত বেতারযন্ত্র নিয়ে ক্যাপ্টেন গিয়াসের সঙ্গে যােগ দেন। এভাবেই যুদ্ধটা অচিরেই একটা সর্বাত্মক জনযুদ্ধে রূপ নেয়। জনযুদ্ধের সেই চেহারাটাই এই বইয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। একজন সাধারণ দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসাবে একাত্তরের দিনগুলােকে তিনি যেভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন, একজন যােদ্ধা হিসাবে যে-অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছে, প্রায় সেভাবেই তা তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে দেশপ্রেম, সাহসিকতা ও মহত্ত্বের ইতিহাসে পৃথিবীর কয়েকটি বড় যুদ্ধ বা বিপ্লবের সঙ্গেই কেবল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের তুলনা। চলতে পারে। সেই সাহস ও মহত্ত্বের কিছুটা পরিচয় পাঠক এ বইটিতে পাবেন। যেকোনাে যুদ্ধই মানুষের মধ্যে এক ধরনের অমানবিক বিভাজন ঘটায়। মানুষ আর তখন মানুষ থাকে না, হয় সে শত্রু নয় মিত্র। অন্য সব বিবেচনাকেও যা আচ্ছন্ন করে ফেলে। যুদ্ধোত্তরকালে ইতিহাস লিখতে বসে ঐতিহাসিক পণ্ডিতরাও অনেক সময় যার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে বা নির্মোহ দৃষ্টি নিয়ে ঘটনার বর্ণনা বা বিচার করতে পারেন। এই গ্রন্থের লেখক তাঁর স্মৃতিচারণায় যথার্থ মুক্তদৃষ্টি ও সত্যনিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের অধীন বাঙালি সামরিকআধাসামরিক বাহিনীর যেসব সদস্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, তাঁদের মধ্যে রাইফেল্স বাহিনীর সৈনিক সংখ্যা ছিল বারাে হাজার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশ রাইফেলস বাহিনীর (বিজিবি) একজন সৈনিকের লেখা এটাই সম্ভবত প্রথম গ্রন্থ।