ভূমিকা এই বইয়ে যুক্তাক্ষর প্রথম ব্যবহৃত হলাে। আমরা যে সব শব্দ কথােপকথনে বেশি ব্যবহার করি তাই দিয়ে আমাদের বইয়ের শুরু। যুক্তাক্ষর শেখানাের দুটি পদ্ধতি আছে : প্রথমটিতে যে সব যুক্তাক্ষর চোখে দেখে সহজে শেখা যায়, যেমন- ক্ল, দ্ম, অথবা ন্দ সেইগুলাে প্রথমে শিখিয়ে পরে কঠিন যুক্তাক্ষর, যেমন- ক্ষ, স্থ অথবা ? শেখানাে; অপরটিতে যে সব যুক্তাক্ষর বেশি প্রয়ােজনে আসে সেইগুলাে প্রথমে শিখিয়ে পরে অন্যগুলাের পরিচয় দেয়া। প্রথম পদ্ধতিটি আমাদের কিছুটা কৃত্রিম মনে হয়েছে। কেননা তাতে অনেক প্রয়ােজনীয় শব্দ কেবল যুক্তাক্ষরের কারণেই পরে শেখাতে হয়। আমরা তাই সেই সব যুক্তাক্ষর প্রথমে নিয়েছি যার ব্যবহার বেশি। প্রথম শিক্ষার্থীর সুবিধার জন্যে এই বইয়ে আমরা লাইনােতে যেভাবে ছাপা হয় সেভাবে যুক্তাক্ষর ছেপেছি, যেমন - ক্ত ঙ্ক স্ক। বইয়ের শেষে যুক্তাক্ষরের লাইনাে হরফ এবং প্রচলিত ছাপার হরফের একটি তুলনামূলক তালিকা দিয়েছি, যাতে পরবর্তী বইয়ে শিক্ষার্থীর কোনাে অসুবিধে না হয়। ক্রিয়াপদের নানা রকম ব্যবহার এই বইয়ে বিশদভাবে দেখানাে হয়েছে। যুক্তাক্ষর ব্যবহার না করার জন্যে প্রথম ভাগে আমরা যাচ্ছে, চাচ্ছে, খাচ্ছে- এই সব অত্যাবশ্যক ক্রিয়ারূপ ব্যবহার করতে পারিনি। দ্বিতীয় ভাগে আমরা সেই অভাব পূরণ করার চেষ্টা করেছি। প্রচলিত ব্যাকরণ আর ব্যবহারিক ব্যাকরণে একটি মূল প্রভেদ আছে। প্রথমটি ভাষার নিয়মগুলাে বর্ণনা করে শব্দের রূপান্তরের উপর জোর দেয়; দ্বিতীয়টি জোর দেয় জীবন্ত ভাষায় শব্দের ব্যবহারের ওপর। শব্দের রূপান্তর ব্যতিরেকেও তার ব্যাকরণিক সংজ্ঞা অনেক সময় বদলে যায়; যেমন- এটি তােমাদের বই, আর আমি তােমাদের দুইটি বই দিয়েছিলাম- এই দুইটি বাক্যে তােমাদের শব্দটির রূপান্তর ঘটেনি, অথচ শব্দটির সংজ্ঞা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। ব্যবহারিক ব্যাকরণে বাক্যে শব্দের ব্যবহারের ওপর বিশেষ জোর দেয়া হয় বলে এর উপযােগিতা অনেক বেশি। আমরা তাই এই ব্যাকরণের পদ্ধতি অনুসরণ করেছি। এই বইয়ে যেসব বাক্যরীতি আমরা ব্যবহার করেছি তার উদাহরণ আমরা দিয়েছি; কিন্তু আমরা আশা করি। শিক্ষক-শিক্ষিকা নিজে নতুন নতুন উদাহরণ তৈরি করে শিশুদের দেখাবেন এবং নতুন উদাহরণ তৈরি করতে তাদেরও উৎসাহ দেবেন। ভাষা যেহেতু সজীব বস্তু, তার শিক্ষা পদ্ধতিতে যাতে যান্ত্রিকতা না এসে পড়ে তার দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা প্রয়ােজন। - গণেশ বাগচী, মহাশ্বেতা দেবী ও বেগম সুফিয়া কামাল
১৪ জানুয়ারি, ১৯২৬ সালে ব্রিটিশ ভারতের ঢাকা শহরে মহাশ্বেতা দেবী জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক ও মানবাধিকার আন্দোলনকর্মী।তাঁর বাবা মণীষ ঘটক ছিলেন কল্লোল সাহিত্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত খ্যাতনামা কবি ও ঔপন্যাসিক। তিনি ‘যুবনাশ্ব’ ছদ্মনামে লিখতেন। মণীষ ঘটকের ভাই ছিলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক। মহাশ্বেতা দেবীর মা ধরিত্রী দেবীও ছিলেন লেখক ও সমাজকর্মী। তাঁর ভাইয়েরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে খ্যাতিমান ছিলেন। যেমন, শঙ্খ চৌধুরী ছিলেন বিশিষ্ট ভাস্কর এবং শচীন চৌধুরী ছিলেন দি ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি অফ ইন্ডিয়া পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক। মহাশ্বেতা দেবীর বিদ্যালয়-শিক্ষা শুরু হয়েছিল ঢাকা শহরেই। ভারত বিভাজনের পর তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। এরপর তিনি শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠভবনে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্য বিভাগে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল হাজার চুরাশির মা, রুদালি, মার্ডারারের মা, বেহুলার বারোমাস্যা, দিয়া ও মেয়ে নামতা, স্বপ্ন দেখার অধিকার, প্রস্থানপর্ব, ব্যাধখণ্ড, অরণ্যের অধিকার ইত্যাদি। মহাশ্বেতা দেবী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ় রাজ্যের আদিবাসী উপজাতিগুলির (বিশেষত লোধা ও শবর উপজাতি) অধিকার ও ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করেছিলেন। তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (বাংলায়), জ্ঞানপীঠ পুরস্কার ও র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার সহ একাধিক সাহিত্য পুরস্কার এবং ভারতের চতুর্থ ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান যথাক্রমে পদ্মশ্রী ও পদ্মবিভূষণ লাভ করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান বঙ্গবিভূষণে ভূষিত করেছিল। তিনি ২৮ জুলাই, ২০১৬ মৃত্যুবরণ করেন।