ফ্ল্যাপে লিখা কথা বিশ শতকের শুরু থেকে ল্যাটিন আমেরিকায় অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় সাহিত্য সৃষ্টি হয়ে চলছে। দু’দশকের বেশি নয়। ভাষা ছিল প্রধান অন্তরায়। ১৯৬৭ সালে গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘One hundred years of solitude ' প্রকাশিত হয়। তিন বছর পর এ বইয়ের ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশিত হয় আমেরিকায়। আর সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে নাটকীয় মোড় নেয় আমেরিকান সাহিত্যের দৃশ্যপট।এ উপন্যাসের শক্তি ও দীপ্তিতে মুগ্ধ আলোচকরা ভাবতে লাগলেন ল্যাটিন আমেরিকার হাতেই উপন্যাসের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। সাহিত্য অঙ্গনে কিছু বিশেষজ্ঞ ছাড়া যে সাহিত্যের সাথে কারো পরিচয় ছিল না সে সাহিত্য বিষয়ে প্রকাশক ও পাঠক একইভাবে আগ্রহী হয়ে উঠলেন।আসলে ১৯৬৭ সাল ল্যাটিন আমেরিকার সাহিত্যের জন্য এক অভিনব সময়, এবছর মার্কেজের উল্লেখিত উপন্যাসই যে কেবল প্রকাশিত হয়েছে তাই নয়, এবছরই মিগুয়েল আস্তুরিয়াস এঞ্জেল সাহিত্য নোবেল প্রাইজ পেলেন। সেই সঙ্গে মারিয়ো ভার্গাস য়োসার ‘The green House' প্রথম রোমুলো গায়েগোস প্রাইজ লাভ করেন- এটি সব দিক থেকেই খূব সম্মানজনকএকটি পুরস্কার। অনুবাদের অভাবে যে ল্যাটিন আমেরিকান সাহিত্য বহির্বিশ্বে অবহেলিত হয়েছে তার দায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্প্যানিস বিভাগের ওপর অনেকাংশেই বর্তায় , কারণ ল্যাটিন আমেরিকার শক্তিশালী সাহিত্যকে বাদ দিয়ে তারা কেবল স্পেনের সাহিত্যের ওপর তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছিল । কেবল বহির্বিশ্বে নয় নিজের দেশেও ল্যাটিন আমেরিকান সাহিত্য অবহেলিত হয়েছে, জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ ছিল দরিদ্র ও অশিক্ষিত। পাঠকস্বল্পতার কারণে লেখকরা প্রকাশক পেতেন না। হোর্হে লুইস বোরহেস এক জায়গায় বলেছেন যে, এক বছরে তাঁর সাঁইত্রিশটি বই বিক্রি হয়েছে দেখে তার মনে হয়েছির ক্রেতাদের চিঠি লিখে ধন্যবাদ জাননো উচিৎ।আর ল্যাটিন আমেরিকার সাহিত্যে যখন-তখন বয়োজ্যোষ্ঠ লেখকরা যে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বয়োকনিষ্ঠ লেখকরা সে সুযোগের আশ্বাসে উৎসাহিত বোধ করলেন। এক সময় কবিতা ছিল ল্যাটিন আমেরিকার সাহিত্যের প্রধান শাখা-কিছু শিক্ষিত মানুষ লিখতেন অপর কিছূ শিক্ষিত মানুষের জন্য। তবে সে সাহিত্য উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। বিশ শতকের শুরু থেকেই সাহিত্যে পরিবর্তন ও নতুন সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিছু সাহিত্যিক ছিলেন যারা ল্যাটিন আমেরিকার রাজনৈতিক বিপর্যয় ইচ্চাকৃতভাবে এড়িয়ে গিয়ে ফরাসী সিম্বলিস্টদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন নিজেদের কে সাধারণের কাছ থেকে আলাদা করে রেখেছিলেন। অপরদিকে কিছু লেখক স্পেনের আঞ্চলিক বিষয়ে লেখার রীতিকে গ্রহণ করে ইউরোপের স্পর্শ পড়েনি এমন সব অনুন্নত অঞ্চল, মানুষ ও সংস্কৃতি নিয়ে লিখেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই দরিদ্র গ্রামবাসীর জীবন ও ভাষা নিয়ে লেখা এসব সাহিত্যে প্রচলিত সমাজের প্রতি বিরোধিতার প্রকাশ ঘটেছে। মুষ্টিমেয় কিছু ইউরোপীয়ান হতদরিদ্র বিশাল জনগোষ্ঠীর ওপর যে অবিচার চালিয়েছে তা উপেক্ষা করে সাহিত্য সৃষ্টি করা কঠিন ছিল। আর লেখকদের অনেকেরেই প্রবণতা ছিল জনসাধারণকে শিক্ষিত করার । আর তাই তখনকার বহু সাহিত্য শিক্ষামূলক হয়ে গেছে। কিন্তু এধরনের সাহিত্য তো আন্তর্জাতিক খ্যাত হতে পারে না। রোরহেস স্পেন থেকে আর্জেন্টিনায় ফিরে গিয়ে বললেন ল্যাটিন আমেরিকার সাহিত্যিকদের স্থানীয় সংস্কৃতিতে আবদ্ধ থাকা বোকামী হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদেরকে পাশ্চাত্য ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতিরও অংশ হতে হবে। সেই সঙ্গে বহু সংখ্যক আধুনিক মননসম্পন্ন লেখক জোর দিয়ে বললেন যে নতুন নতুন পরিক্ষা নিরিক্ষার মধ্য দিয়ে যে সাহিত্য সৃষ্টি হতে তাই আন্তর্জাতিক খ্যাতি বয়ে আনবে। সূচিপত্র *রোমুরো গায়েগোস *শিখরে শান্তি *হোর্হে লুইস বোরহেস *১৯৮৩ সালের ২৫ আগস্ট *হোর্হে আমাদো *পাখিদের অলৌকিক কাণ্ড *স্বেদ *অক্টাভিও পাজ *নীল স্তবক *রেনে মার্কেজ *ম্যানহাটান দ্বীপে *রুবেম ফনসেকা *নিঃসঙ্গ হৃদয় *গ্রাব্রিয়েল গার্সিয়া সার্কেজ *বালাজারের অপূর্ব অপরাহ্ণ *বিষক্রিয়ায় মৃত সতেরোজন ইংরেজ *আলো জলের মতো *আবেলার্দো কাস্তিলো *আর্নেস্তোর মা *মারিয়ো ভার্গাস য়োসা *রবিবারে *ছোট ভাই *এলডা ভ্যান স্টিন *মিস্টার ও মিসেস মারটিনস *ইসাবেলা আয়েন্দে *বিচারকের পত্নী *ব্যাঙের মুখ
মেহবুব আহমেদ দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন। পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্য চর্চাও অব্যাহত রেখেছেন। বিভিন্ন পত্রিকায় গবেষনাধর্মী প্রবন্ধ লিখেছেন ভাস্কর নভেরা আহমেদ ও পাশ্চাত্যের বেশ কয়েকজন আধুনিক শিল্পীকে নিয়ে তাদের শিল্পভাবনাকে যথাযথভাবে অনুধাবন করার প্রচেষ্টায়। অনুবাদও করছেন দীর্ঘদিন থেকেই। তাঁর অনুদিত হাের্হে লুইস। বাের্হেস-এর ডক্টর ব্রডির প্রতিবেদন ও অন্যান্য গল্প, লাতিন আমেরিকার ছােটগল্প ও ভিনসেন্ট ভেন গগ-এর চিঠি বােদ্ধা পাঠক মহলে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে।