ভূমিকা বিবাহ সম্পর্কে অবগত নয় এমন মানুষ দুনিয়াতে বোধ হয় খুব কমই আছে। মুসলমান-অমুসলমান এবং নারী পুরুষ নির্বিশেষ প্রায় সকলের জীবনেই একদিন বিবাহের আবির্ভাব ঘটে। বিবাহের মাধ্যমেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই পৃথিবকে আবাদ রাখবেন। আর ইসলামী শরীআতে তো বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে। কিন্তু ইবাদতের সেই পদ্ধতিটি আজ এতই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ধনী-গরীব, ধার্মিক অধার্মিক প্রায় সকলেই এ বিষয়ে বিপদগ্রস্থ। জীবনের এমন একটি মধুর বিষয় আজ মানুষের নিকট সর্বাধিক দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছেলে মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যাওয়ার পরেও বিভিন্ন সামাজিকতা আর লৌকিকতা পালন করতে যেয়ে সময়মত তাদের বিবাহ দেয়া যাচ্ছে না। এতে সমাজ কলুষিত হচ্ছে। যিনা ব্যভিচার মহামারীর আকারে বিস্তার লাভ করছে।
অথচ ইসলাম বিবাহ শাদীকে সহজতম একটি বিষয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহবায়ে কেরাম নিজেদের জীবনে এটি অত্যন্ত সহজভাবে প্রতিষ্ঠিত করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। যে বিবাহ ছিল জীবনের অন্যতম একটি আনন্দময় ঘটনা সেই বিবাহই আজ চরম নিরানন্দ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। পরিণতিতে স্বপ্নীল জীবনের প্রথম পর্বেই কত শত যুবক যুবতী হতাশাগ্রস্ত হয়ে বর্ণময় এই পৃথিবীকে বিদায় জানাচ্ছে। কন্যা সন্তানের জন্ম হলে কত পিতা মাতা ক্ষোভে দুঃখে তাদেরকে গলা টিপে হত্যা করছে । আবারও ফিরে গেছে এই সমাজ জাহেলিয়াতের অন্ধকার যুগে। বস্তুতঃ সুন্নতে নববী এবং ইসলামী বিধান পরিত্যাগ করে মনমত চললে তার পরিণতি এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। কন্যার বিবাহ উপলক্ষে যৌতুকের নামে লুণ্ঠন আর বরযাত্রীর নামে ডাকাতির খানার যে প্রচলন আমাদের সমাজে হয়েছে তাতে এই বিপুল ব্যয়ভার বহন করা অনেকের পক্ষেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এই বিপদ থেকে বাঁচতে হলে নবীজির আদর্শ বুকে ধারণ করা ছাড়া বিকল্প আর কোন পথ নেই।
বিবাহ কিভাবে ইসলামী পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা যায় সে সম্পর্কে উলামায়ে কেরাম ছোট বড় বিভিন্ন আকারের কিতাব রচনা করেছেন। হাকীমুল উম্মত, মুজাদ্দিদুল মিল্লাত, হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ:) তা বিভিন্ন লেখনী ও মাওয়ায়েযের মধ্যে এসম্পর্কে বিশদ আলোকপাত করে জাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়েছেন এবং এটিকে কেন্দ্র করে সমাজে যেসব রুসুমাত কুপ্রথা আর বিজাতীয় প্রথা চালু রয়েছে সেগুলির মূলোৎপাটন করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এসব বিষয়গুলি বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কারণে তা থেকে উপকৃত হওয়া কিছুটা মুশকিল হয়ে পড়েছিল। আল্লাহ পাকের মেহেরবাণী যে, মাওলানা যায়েদ মাযাহেরী সাহেব অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেসব বিষয়গুলিকে একত্রিত করে গুরুত্বপূর্ণ একটি সংকলন তৈরী করেছেন, যা এ বিষয়ের একটি মাইলফলক।
বইটির বাংলা অনুবাদ আমরা পাঠকের হাতে তুলে দেয়ার প্রয়াস চালিয়েছি। আশা করি বইটি যথাযথ ভাবে অনুসরণ করে আমরা যদি আমাদের বিবাহশাদী সম্পন্ন করি তাহলে এটি ইবাদতের সাথে সাথে সুখী জীবন গঠনের জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। আল্লাহ তাআলা এই সংকলনটি কবুল করুন এবং লেখক, সংকলন ও অনুবাদকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জাযায়ে খায়ের দান করুন এবং উম্মতের ইসলাহ ও সংশোধনের মাধ্যম বানিয়ে দিন। আমীন! মীযানুর রহমান কাসেমী
সূচিপত্র * বিবাহ * কুফু বা সমতা * মহরের বর্ণনা * যৌতুক * রুসূম ও কু প্রথা * বাসর রাতে কি করণীয় * শরীয়তের দৃষ্টিতে একাধিক বিয়ে * পর্দার শরঈ বিধান * স্বামী স্ত্রী মিলন বিধান * গোসলের বর্ণনা * তালাকের বর্ণনা