ফ্ল্যাপে লিখা কথা চাঁদের পাহার বিভূতীভূষণ বন্দোপাধ্যায় লিখেছন বহু বছর আগে। অথচ আজও পড়লে সেটাকে কিন্তু আধুনিক অভিযান কাহিনী বলেই মনে হয়ে। বাজারে অনেক গুলো প্রকাশনা সংস্থায় চাঁদের পাহাড় আছে। কিন্তু আমরা এটাকে একটু অন্যরকম করে উপস্থাপন করেছি। মূল উপন্যাসের সাথে দেয়া হয়েছে আফ্রিকা সম্বন্ধে অনেক তথ্য। শুধু তা্ই নয়, তার সাথে আছে উপন্যাসে বর্ণনা করা জিনিস বা প্রানীগুলোর রঙিন ছবি। আশা করি একটু অণ্যরকম লাগবে পাঠকদের কাছে। আর এই বইয়ের যারা নতুন পাঠক তাদের তো দ্বিগুন আকর্ষণ।
লেখকের ভূমিকা ‘চাঁদের পাহাড়’ কোনও ইংরিজি উপন্যাসের অনুবাদ নয় বা ঐ শ্রেণীর কোনও বিদেশী গল্পের ছায়বলম্বনে লিখিত নয়। এই বইয়ের গল্প ও চরিত্র আমার কল্পনাপ্রসুত। তবে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগলিক সংস্থান ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্নানাকে প্রকৃত অবস্থার অনুযায়ীর করবার জন্য আমি স্যার এইচ, এইচ জনস্টন, রোসিটা ফরবস, প্রভৃতি কয়েকজন বিখ্যাত ভ্রমণকারীর গ্রন্থের সাহায্য গ্রহণ করিছি। প্রসঙ্গক্রমে বলতে পারি যে, এই গল্পে উল্লেখিত রিখটারসভেল্ট পর্বতমালা মধ্য- আফ্রিকার অতি প্রসিদ্ধ পর্বতশ্রেণির এবং ডিঙ্গোনেক (রোডেসিয়ান মনস্টার) ও বুনিপের প্রবা জুলুল্যাণ্ডের বহু অরণ্য অঞ্চলে আজও প্রচলিত।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছু কালজয়ী উপন্যাস রচনার মাধ্যমে জয় করে নিয়েছেন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের হৃদয়। শুধু উপন্যাসই নয়, এর পাশাপাশি তিনি রচনা করেছেন বিভিন্ন ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, দিনলিপি ইত্যাদি। প্রখ্যাত এই সাহিত্যিক ১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন, তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল যশোর জেলায়। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করেন, যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর প্রথম বিভাগে এনট্রান্স ও আইএ পাশ করার মাধ্যমে। এমনকি তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাশ করেন। সাহিত্য রচনার পাশাপশি তিনি শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমূহ এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো 'পথের পাঁচালী', যা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হওয়ার মাধ্যমে। এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় অর্জন করেছেন অশেষ সম্মাননা। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই এর মধ্যে আরো উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো 'আরণ্যক', 'অপরাজিত', 'ইছামতি', 'আদর্শ হিন্দু হোটেল', 'দেবযান' ইত্যাদি উপন্যাস, এবং 'মৌরীফুল', 'কিন্নর দল', 'মেঘমল্লার' ইত্যাদি গল্পসংকলন। ১০ খণ্ডে সমাপ্ত ‘বিভূতি রচনাবলী’ হলো বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমগ্র, যেখানে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার পৃষ্ঠায় স্থান পেয়েছে তার যাবতীয় রচনাবলী। খ্যাতিমান এই সাহিত্যিক ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর বিহারের ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর 'রবীন্দ্র পুরস্কারে' ভূষিত হন।