"সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন" বইটির ফ্ল্যাপের অংশ থেকে নেয়া: হ্যারি সেলডন গ্যালাক্সির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতবিদ। মানবজাতিকে রক্ষার জন্য আজীবন সাধনার মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন সাইকোহিস্টোরির মতাে অতি উন্নত এক বিজ্ঞান। এই বিজ্ঞানের সাহায্যে তিনি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে প্রথম গ্যালাক্টিক এম্পায়ার। এই ধ্বংস ঠেকানাের কোনাে উপায় নেই। তারপরে গ্যালাক্সিতে শুরু হবে ত্রিশ হাজার বছরব্যাপী অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, হানাহানি এম্পায়ারের পতন ঠেকানাে না গেলেও ত্রিশ হাজার বছরের অরাজকতা কমিয়ে মাত্র এক হাজার বছরের মধ্যে তিনি প্রথমটার চেয়ে আরাে শক্তিশালী এবং সুসংহত নতুন এম্পায়ার গড়ে তুলতে পারবেন। পরিকল্পনা মােতাবেক সম্পূর্ণ নতুন এক গ্রহে তৈরি করা বিজ্ঞানীদের নতুন এই কলােনিই পরিচিত হয়ে উঠে ফাউণ্ডেশন নামে। প্রথম গ্যালাক্টিক এম্পায়ারের চূড়ান্ত পতন ঘটে ফাউণ্ডেশনের হাতে। তারপর গ্যালাক্সিতে ফাউণ্ডেশনের রাজ্য বিস্তার চলতে থাকে। অব্যাহত গতিতে। কিন্তু আচমকা মিউল নামের এক মিউট্যান্ট শক্তির আবির্ভাবে তার মেন্টাল পাওয়ারের কাছে ফাউণ্ডেশনও পরাজিত হয়। যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার একমাত্র উপায় সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন। কারণ একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে সেলডন মেন্টাল সাইন্টিস্টদের নিয়ে আরেকটা ফাউণ্ডেশন তৈরি করে গেছেন মিউল প্রথম থেকেই সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন খুঁজছে, নইলে তার গ্যালাক্সি দখল সম্পূর্ণ হবে না। কিন্তু কোথায় সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন?
বিংশ শতকের অন্যতম সেরা লেখক আইজ্যাক আসিমভ সাহিত্যজগতের এক উজ্জ্বল নাম। তিনি ১৯২০ সালের ২ জানুয়ারি সোভিয়েত রাশিয়ার পেত্রোভিচি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারের সাথে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ব্রুকলিনে শুরু করেন নতুন জীবন। ছোটবেলায়ই তাঁর বাবা তাকে লাগিয়ে দেন নিজেদের ক্যান্ডিশপে দোকানদারির কাজে। ছোট্ট আসিমভ পাঁচ বছর বয়সেই নিজে নিজে পড়তে শিখে যান। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি হাই স্কুল শেষ করেন এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি ১৯৩৯ সালে ব্যাচেলর অব সায়েন্স এবং পরবর্তীতে এমএ ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে তিনি বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি হলেও তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করতে নিয়মিত শিক্ষকতা করেননি। ১৯৫০ সালে বের হয় তাঁর প্রথম বই ‘পেবলস ইন দ্য স্কাই’, যা জয় করে নেয় সাধারণ পাঠকের মন। এরপর একের পর এক লেখা বের হতেই থাকে তাঁর। তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যকর্মের মূল আধেয় হলো সায়েন্স ফিকশন, পপুলার সায়েন্স, রহস্য ইত্যাদি। সৃজনশীল মেধাসম্পন্ন এই লেখক ৫০০টিরও বেশি বই রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। জনপ্রিয় লেখক আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমূহ হলো, ‘আই,রোবট (১৯৫০)’, ‘ফাউন্ডেশন (১৯৪২)’, ‘দ্য এন্ড অব ইটারনিটি (১৯৫৫)’, ‘দ্য কেভস অব স্টিল (১৯৫৩)’, ফ্যান্টাস্টিক ভয়েজ (১৯৬৬)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত উপন্যাসই শুধু নয়, তুমুল জনপ্রিয় তাঁর ছোটগল্পগুলোও। আসিমভ এর রচনাগুলো থেকে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের চলচ্চিত্র, যার মাঝে আছে ‘আই,রোবট (২০০৪)’, ‘বাইসেন্টেনিয়াল ম্যান (১৯৯৯)’ ইত্যাদি। বিশ্বজোড়া প্রকাশিত আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমগ্র জয় করে নিয়েছে সায়েন্স ফিকশন পাঠকদের মন। তাঁর বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বের নামিদামী পরিচালক তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র, বানিয়েছেন সিরিজ। ১৯৮৭ সালে ‘সায়েন্স ফিকশন রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ তাকে ‘গ্র্যান্ড মাস্টার অব সায়েন্স ফিকশন’ সম্মানে ভূষিত করে। তাঁর লেখা ‘ফাউন্ডেশন (ট্রিলজি)’ ১৯৬৬ সালে এনে দেয় ‘হুগো এওয়ার্ড’, ‘দ্য গডস দেমসেল্ভস’ এনে দেয় একইসাথে ‘হুগো’ ও ‘নেবুলা’ অ্যাওয়ার্ড। কল্পবিজ্ঞানের এই মহা কারিগর ১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল ব্রুকলিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।