ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা ‘ছায়ামানুষ ভাঙামানুষ’ কবি হাসান হাফিজের সর্বসাম্প্রতিক কাব্যগ্রন্থ।প্রত্যেক মানুষই তার নিজের ভেতর, মনোগহীনে অতল নৈঃসঙ্গ্যে আক্রান্ত। সেখানে কেউই তার সঙ্গী নয়, প্রতিবেশীও নয়।মানুষ আসলে এক চলমান ভাঙচুরেরই প্রতিচ্ছবি-হয়তো কোনও দূরন্তর ছায়ারই টুকরোটাকরা প্রতিভাস! মানুষের সূক্ষ্ম চিরল বোধের নিভৃতি মূলে, ওলটপালট চৈতন্যের চরাকরে, অস্তিত্বের ‘রুখুসুখু বালিয়াড়িতে, আত্মার অনুসন্ধানে, সর্বত্র।এই গ্রন্থে বিধৃত হয়েছে মানবমনের অন্তর্লীন বেদনাবিষাদের হার্দ্য চিত্রমালা, আর্ত বিলীয়মান উপলদ্ধি ও সংবেদনের নান্দনিক জলছবি। জীবন কী,কোথায় মোক্ষ এসব প্রশ্নের তীরে বিদ্ধ হয়েছে এই কবির মনোলোক, তীব্র জিজ্ঞাসার সম্মোহনে নিরন্তর চলেছে তার পরিক্রমণ। মৃত্যুচিন্তা অনিবার্য আচ্ছন্নতায় আধো-আলো আধো-আঁধারিতে তিনি নিজেকে খুঁড়ে খুঁড়ে বের করে আনতে প্রয়াসী হন জীবনসত্যের অমৃত নির্যাস, প্রতিদিনকার দ্বন্দ্বমুখরতার মধ্যে তিনি আত্মা ও শরীর চিরে চিরে দেখতে চান। এই চাওয়া শুধু আকাঙ্খার মধ্যেই মীমিত থাকে না, চিরন্তন এক আবেদনে আপ্লুত ও শিল্পিত হয়ে ওঠে কবিতাভাষায়, চিত্রসৃজনে।শুধুই ব্যক্তির অনুভূমিত নয়, সমাজভাবনায়ও দীর্ণ, আলোড়িত এই কবি।মূলত মানুষের প্রতি অঙ্গীকারই এই বেদনায় বিদ্ধ করে।মঙ্গার মর্মান্তিক ছবিও উপস্থাপিত হয় হসজ ভঙ্গিতে। হাসান হাফিজের কণ্ঠ উচ্চকিত স্লোগানধর্মী নয়, নম্র কিন্তু দৃঢ়তায় অনড়। শ্যামল সবুজ শান্ত ধীর প্রকৃতির উদারতা কাছে ফিরে যেতে চান তিনি।এই অভিযাত্রায় পাঠককেও তার সঙ্গী করে নেন।
সূচিপত্র *ছায়ামানুষ ভাঙামানুষ *দরিয়া-গল্প *দ্বন্দ্ব পছন্দ *নিয়তি কেমন *কথা নীরবতা কথা *প্রত্যাশার বিপরীতে রৌদ্রজ্বালায় জ্বলি *প্রত্যেকেই দুই পঙ্ক্তি *কুটুম্বিতার সঞ্জীবনী *ঘূর্ণিজলে স্বপ্ন ভেসে যায় *কৃতঘ্নের জন্যে মায়া *বৈঠা নে রে মরণমাঝি *মেঘমেঘালির সম্মোহনে *অবিশ্বাসের শক্তি *কোথায় মুক্তি *ভবগাঙে বিসর্জিতা জয় *ছুটির বিপদ *ওতপ্রোত চিন্তাগ্রন্থি *ব্যর্থতা *মঙ্গা ও মেঘ *বেকারের জন্মদিন *ভালোবাসাও মারণাস্ত্র *অন্তবিহীন অনন্ত যে *বেড়ে চলে জন্মঋণ *পোহায় না রাত *কথার দৌর্বল্য *অন্বেষার বিঘ্ন ভাঙচুর *জীবনধাঁধা *তুমি কার *তিত্তাতার অন্য পিঠ *তৃষা অবসাদে *দু’চার পঙ্ক্তি টেরাকোটা *স্বপ্নে সত্য যে কবিতা *কেউ কেউ পারে *নদী নাও এই নিবেদন *ধিক্কার মুঠোফোনে *মেঘমল্লার *নিভূত আকুতি *আপোসের বিপরীতে *মুক্তি:দূর আলোরেখা *নাই নাই..... *জীবন অনন্ত সত্য *মন-রহস্য *ছায়াভাঙা মানুষের শ্রম *কাছেই রয়েছি।
হাসান হাফিজের জন্ম নারায়ণগঞ্জের সােনারগাঁও উপজেলার এলাহি নগর গ্রামে, ১৫ অক্টোবর ১৯৫৫। যখন ছিলেন স্কুলছাত্র, প্রথম ছড়া ছাপা হয় ইত্তেফাকের কচি কাঁচার আসরে। পড়াশােনা করেছেন হােসেনপুর হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য,গণযােগাযােগ ও সাংবাদিকতায় এম.এ.(ডাবল)। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত। দৈনিক বাংলায় সূচনা। আরাে কাজ করেছেন জনকণ্ঠ, কলকাতার সাপ্তাহিক দেশ (এখন পাক্ষিক), বৈশাখী টেলিভিশন এবং আমার দেশ-এ। এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থ ১৪০। সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে এই লেখক পেয়েছেন বহু সম্মাননা ও পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক, ডাকসু সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাঙ্ক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, কলকাতার সৌহাদ্য কবিতা উৎসব সম্মাননা, জাতীয় প্রেস ক্লাব লেখক সম্মাননা, ঢাকা রিপাের্টার্স ইউনিটি লেখক সম্মাননা, কবিতালাপ পুরস্কার, কবি জসীম উদ্দীন স্মৃতি পুরস্কার, এম নূরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, স্বপ্নকুঁড়ি পদক ইত্যাদি। হাসান হাফিজ বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের (এফইজেবি) সাধারণ সম্পাদক, বাংলা একাডেমির জীবন সদস্য। সাহিত্য-সাংবাদিকতা সূত্রে ভ্রমণ করেছেন বিশ্বের ১৫ দেশ। তার স্ত্রী শাহীন আখতার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান ডা. শিহান তাওসিফ গৌরব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত।