বইটির নামকরণ নিয়ে খানিক সমস্যা দাঁড়িয়েছিল। ত্রিশটা নিবন্ধের ত্রিশটা নাম, তা থেকে একটি বাছাই করতে হবে। কোনটাই ঠিক জুতসই মনে হচ্ছিল না। প্রকাশক শামীম রহমান প্রস্তাব করলেন, 'অ্যালবাম' নামটা কেমন হয়। এমন কোন আহামরি নাম নয়, মানছি, কিন্তু লেখাগুলোর আপাতবিচ্ছিন্ন ভাবধারার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ মানানসই বলেই মনে হল। অ্যালবামই তো বটে। বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন ভাবের ছবি দিয়ে গাঁথা একটি অ্যালবামই তো বলা যায় একে। যোগসূত্র যে একটা নেই লেখাগুলোর তা নয়। যোগসূত্র হল আমার সুদীর্ঘ প্রবাসজীবন। সে জীবন থেকে আমি কি পেয়েছি এবং সে-জীবন আমার কাছ থেকে কি নিয়ে গেছে তারই খণ্ড খণ্ড বিবরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লেখাগুলোর নানা জায়গায়। যারা প্রবাসে আসে প্রথম যৌবনে তাদের কাছে প্রবাসের প্রাচুর্যটাই চোখে পড়ে সবার আগে। তারপর যখন পুরো একটা জীবন কেটে যায় দেশের বাইরে তখন চোখে পড়ে শুধু প্রবাসের শূন্যতাটা। প্রবীণ বয়সে তাই আমরা এত স্মৃতিনির্ভর হয়ে পড়ি। দেশ আমাদের ডাক দেয় এমন করে। একদিন আমরা ছটফট করতাম দেশ ছেড়ে বিদেশে আসার জন্যে, এখন ছটফট করি দেশে ফিরে যাওয়ার জন্যে। দেশ ছাড়ার সাধটা অনেকেরই সিদ্ধ হয় কিন্তু ফেরার সাধটা সিদ্ধ হয় না প্রায় কারুরই।
ড. মীজান রহমানের জন্ম ১৯৩২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, পরবর্তীকালে বিলেতের কেমব্রিজ ও ক্যানাডার নিউ ব্রান্সউইক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশােনা শেষ করে ১৯৬৫ সালে অটোয়াস্থ কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যােগ দেন। একটানা তেত্রিশ বছর শিক্ষকতা করে অবসর গ্রহণ করেন ১৯৯৮ সালে। বর্তমানে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন Distinguished Research Professor হিসেবে কর্মরত আছেন। গণিতশাস্ত্রের প্রখ্যাত পণ্ডিত জর্জ গ্যাসপারের সঙ্গে রচিত তাঁর গণিতবিষয়ক গ্রন্থ Basic Hypergeometric Series (১৯৯০), আধুনিক গণিতের একটি উল্লেখযােগ্য ও অপরিহার্য গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত। একাডেমিক ব্যুৎপত্তি ও ব্যস্ততার পাশাপাশি মীজান রহমান তার আবাল্যের ভালােবাসা সাহিত্য ও সমাজ ভাবনার সঙ্গেও সংশ্রব বজায় রাখেন সাধ্যমতাে। তারই ফলস্বরূপ তাঁর সাহসী ও সংবেদনময়, মৌলিক ও মানবিক রচনার সুনির্বাচিত একটি সংকলন প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে ‘তীর্থ আমার গ্রাম' নামে। ২০০১ সালে প্রকাশিত হয় “লাল নদী' এবং ২০০২ সালে ‘প্রসঙ্গ নারী এবং অ্যালবাম 'অনন্যা আমার দেশ’ তার পঞ্চম প্রকাশনা।