"মাসুদ রানা : প্রবেশ নিষেধ"বইটির প্রথমের কিছু অংশ: এক বিশাল ডানা মেলে কে এল এম ডিসি এইট নেমে এল শিফল এয়ারপাের্টের রানওয়ের ওপর, মাইল দেড়েক দৌড়ে গতিটা একটু সামলে নিয়ে ধীরে সুস্থে এসে দাঁড়াল এয়ারপাের্টের টারমিনাল বিল্ডিং ঘেঁষে। শেষবারের মত ছােট্ট গর্জন ছেড়ে বন্ধ হয়ে গেল এঞ্জিন। সবার আগে সিটবেল্ট খুলে উঠে দাড়াল রানা। সােহানা চৌধুরী এবং তার পাশে বসা, তারই মত চোখা সুন্দরী মারিয়া ডুকুজের দিকে একটি বারও না চেয়ে হালকা এয়ার ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেল সে এগজিট লেখা দরজার দিকে। যেন চেনেই না ওদের। স্টুয়ার্ডেসের মিষ্টি হাসির প্রত্যুত্তরে যতটা না হাসলেই নয় সেটুকু হেসে ডিজএমবাকেশন টিউবে উঠে পড়ল রানা। হাসি আসছে না ওর। কয়েকটা দুশ্চিন্তা এক সঙ্গে ঘুরছে মাথার মধ্যে। প্রথমত, সােহানা এবং মারিয়া এই দুই বােঝা দুই কাঁধে চেপে যাওয়ায় যারপরনাই বিরক্ত হয়েছে সে মনে মনে, কিন্তু কিছুই বলার উপায় নেই—একজনকে চাপিয়েছেন বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের কর্ণধার মেজর জেনারেল রাহাত খান, অপরজনকে ইন্টারপােলের নার্কোটিকস ডিভিশনের কট্টর চীফ ফিলিপ কার্টারেট। এঁরা। মনে করেছেন রানার এবারের বিপজ্জনক অ্যাসাইনমেন্টে ডাইভার্শন তৈরি করতে হলে দুজন মেয়েকে সাথে নিয়ে যাওয়া ওর একান্ত দরকার। দুই সুন্দরীই জীবনের প্রথম পা রাখছে অ্যামস্টার্ডামের মাটিতে। প্রতি পদে কাজে বাধার সৃষ্টি করবে এরা, সুবিধের চেয়ে অসুবিধে যে কত বেশি হবে নিজে বুঝতে পারছে রানা পরিষ্কার, কিন্তু কিছুতেই বােঝাতে পারেনি সে দুই বুড়াের একজনকেও। এদের দুজনই কাজ করছে ড্রাগসের ওপর বেশ কয়েক বছর ধরে, তথ্যের দিক থেকে এরা একেকজন তিনটে মাসুদ রানার সমান জ্ঞান। রাখে। কিন্তু ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মুখােমুখি দাড়াতে হলে জ্ঞান••• যাকগে, মেনে যখন নিতেই হবে, মেনে নিয়েছে রানা—আসল কাজের সময় এদের কিভাবে দূরে সরিয়ে রাখবে সে প্ল্যানও ঠিক করে নিয়েছে আগেই; আসল দুশ্চিন্তা এরা নয়, ইসমাইলের পাঠানাে কোডেড মেসেজটা। রওয়ানা হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে পেয়েছে মেসেজ: বিশেষ জরুরী কিছু তথ্য নিয়ে অপেক্ষা করবে ইসমাইল শিফল এয়ারপাের্টে। মাটি স্পর্শ করবার সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলাে নাকি রানার দরকার, এবং সেই তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুত পরিবর্তন করা দরকার প্ল্যান-প্রােগ্রাম। এই রকম একটা মেসেজের আগামাথা
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রহস্য-রোমাঞ্চ গল্পের সাহিত্যধারাকে প্রায় একা হাতে জনপ্রিয় করে তুলেছেন যে মানুষটি তিনি কাজী আনোয়ার হোসেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমেই তৈরি হয়েছে এই সাহিত্যধারার বিশাল পাঠকশ্রেণী। বিদ্যুৎ মিত্র এবং শামসুদ্দিন নওয়াব ছদ্মনামে লিখেছেন অসংখ্য গল্প। পাঠকদের কাছে পরিচিত প্রিয় কাজীদা নামে। প্রখ্যাত গণিতবিদ ও সাহিত্যিক বাবা কাজী মোতাহের হোসেন ও মা সাজেদা খাতুনের ঘরে ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন কাজী শামসুদ্দিন নওয়াব। পরিবারের সঙ্গীতচর্চার ধারাবাহিকতায় প্রথমে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ১৯৬৩ সালে বাবার দেওয়া টাকায় সেগুনবাগিচায় প্রেসের যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে সেই প্রেস থেকেই নিজের সম্পাদনায় পেপারব্যাকে সৃষ্টি করেছেন কুয়াশা, মাসুদ রানা, তিন গোয়েন্দার মতো চিরতরুণ চরিত্রগুলোর। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বই ‘কুয়াশা’ সিরিজের মাধ্যমেই মূলত রহস্যধারার বই প্রকাশ শুরু সেবা প্রকাশনীর। এরপর এক বন্ধুর প্রকাশিত জেমস বন্ডের ‘ডক্টর নো’ পড়ে ঠিক করেন বাংলাতেই লিখবেন এই মানের থ্রিলার। সালটা ১৯৬৫, মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরে এলেন চট্টগ্রাম, কাপ্তাই ও রাঙামাটি। সাত মাস সময় নিয়ে লিখলেন মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম গল্প ‘ধ্বংস পাহাড়’। এই সিরিজের কাজী আনোয়ার হোসেনের বই সমূহ এর মধ্যে প্রথম তিনটি বাদ দিলে বাকিসবগুলোই লেখা হয়েছে বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বই সমগ্র রহস্য-রোমাঞ্চ সাহিত্যের যে পিপাসা পাঠকের মনে তৈরি করেছে তা মেটাতে সাড়ে চারশোরও বেশি মাসুদ রানার বই প্রকাশ করতে হয়ছে সেবা প্রকাশনীকে, যার ধারাবাহিকতা আজও চলমান।