"বাংলাদেশর মাছ" বইটির প্রাক-কথন অংশ থেকে নেয়াঃ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জলাশয় বাড়ছে না। একসময় প্রাকৃতিক প্রজনন থেকে যেসব মাছ জন্মাত তা দিয়েই আমাদের চলত। এখন আর চলছে না। এ কারণেই বদ্ধজলাশয়ে মাছ চাষ করে অতিরিক্ত চাহিদা মেটানাের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উপযােগিতার কথা বিবেচনায় রেখেই গবেষকরাও মাছের চাষ সম্পর্কিত অনেক বই লিখেছেন এবং সে সব বই বাজারে মােটামুটি সহজলভ্য। তবে হতাশ হয়েছি এ কারণে যে সেসব বইয়ে মাছের পরিচিতিমূলক বর্ণনা মােটেও নেই। যদি মাছই চেনা না যায়, তাহলে চাষ হবে কিভাবে। আর আমাদের দেশে শতকরা কতজন লােকই বা সবয়বে মাছের সঙ্গে পরিচিত! এই প্রয়ােজনীয়তার কথা বিবেচনায় রেখেই বাংলাদেশের মাছ’ গ্রন্থে মাছের বাহ্যিক গঠন ও আকৃতির একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। গ্রন্থটি মাছ সম্পর্কিত কোনাে গবেষণা গ্রন্থ নয়। তবে IUCN প্রদত্ত তালিকানুযায়ী এই অঞ্চলের তিন ধরনের বিপর্যস্ত মাছগুলাে চিহ্নিত করেছি। (তারকা চিহ্নিত মাছগুলাে) এই তিন ধরনের বিপন্ন মাছের মধ্যে কিছু প্রজাতি একেবারেই দুর্লভ হয়ে উঠেছে। কিছু বিপন্ন, আর কিছু অচিরেই বিপন্ন হবার সম্ভাবনা- এমন মাছগুলােও উক্তগ্রন্থে স্থান পেয়েছে। তবে একটি কথা বলা প্রয়ােজন যে, প্রাণিকুল তার বসবাসের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো ভৌগলিক সীমারেখা মেনে চলে না। কিছু কিছু স্থানিক প্রাণী রয়েছে যারা নির্দিষ্ট একটি এলাকাতেই বসবাস করতে পছন্দ করে। পুঁটি মাছ আমাদের দেশে যেমন পাওয়া যায় তেমনি থাইল্যান্ড কিংবা মালয়েশিয়াতেও পাওয়া যায়। আবার চেকা কিংবা কাইক্যা আমাদের দেশে যতটা সহজলভ্য অন্যদেশে ততটা নয়। বাংলাদেশের এগারাে-বর্গের মিঠা পানির মাছ এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। এদের প্রজাতি ও পরিবার আলাদা আলাদা। পরিবর্তিত বৈজ্ঞানিক নামগুলােও সংযােজিত হয়েছে। নিতান্তই প্রয়ােজনের তাগিদে কিছু কিছু প্রাণী বিজ্ঞানজাত শব্দের ব্যবহার করেছি। যেমন- তুন্ড (জীবজন্তুর মুখ, চঞ্চু, ঠোট, ওষ্ঠাধর ইত্যাদি বুঝাতে ব্যবহৃত হয়), ঝিল্লি (চামড়ার পাতলা আবরণ অর্থে), প্রােটোজোয়া (সরলতম শ্রেণীর এককোষবিশিষ্ট প্রাণী; আদ্যপ্রাণী), ডায়াটম (আনুবীক্ষণিক এককোষী শৈবাল), ফুলকা (মাছের কানকোর নিম্নস্থ চিরুনির মতাে শ্বাসযন্ত্রবিশেষ), কানকো (মাছের ফুলকার উপরের শক্ত আবরণ) ইত্যাদি।
জন্ম মাতুলালয়ে, ৩০ অক্টোবর। বাবা : একেএম ফজলুল করিম, মা : মনোয়ারা বেগম। গ্রাম : লক্ষণপুর, পোস্ট : ভবানীজীবনপুর, উপজেলা : বেগমগঞ্জ, জেলা : নোয়াখালী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা। একযুগেরও বেশি সময় দৈনিক প্রথম আলোয় ‘প্রকৃতি’ কলামে লিখছেন। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৮। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : বাংলাদেশের নদী, বর্ণমালায় বাংলাদেশ, বিশ্বের সেরা দর্শনীয় স্থান, বাংলাদেশের মেলা, ঘুরে আসি বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ফুল ও ফল, জীবনের জন্য বৃক্ষ, বিপন্ন প্রজাতির খেরোখাতা, প্রকৃতি ও প্রাণসম্পদ (সম্পাদনা), বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, ঋতুর রঙে ফুলের শোভা, আমাদের সবুজ বন্ধুরা, ভোরের ফুল সন্ধ্যার পাখিরা, আমাদের পার্ক ও উদ্যান, ছয় রঙের বাংলাদেশ, বাংলার শত ফুল, জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলার পুষ্প-বৃক্ষ ইত্যাদি। পরিবেশসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৩ সালে কাজী কাদের নওয়াজ স্বর্ণপদক, ১৪০৮ ও ১৪১০ সালে অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার এবং ২০১১ সালে এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। নেশা ছবি তোলা ও ভ্রমণ।