ফ্ল্যাপে লিখা কথা ড. আজিজুর রহমান মল্লিক আমাদের শিক্ষা ও বুদ্ধিবৃত্তির জগতে এক স্মরণীয় ব্যক্তি। শিক্ষাবিদ, গবেষক, উপাচার্য হিসেবে অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর প্রশাসন ও শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠন ও পুনর্বিন্যাসে যে নতুন ও সমযোপযোগী উদ্যোগ এবং নেতৃত্বের প্রয়োজন ছিল, সে ক্ষেত্রে তিনি তাঁর ভূমিকাটি নিপুণ দক্ষতায় পালন করেছিলেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ফলে তৎকালীন নবীন রাষ্ট্রটির শিক্ষা-পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন ছিল, সেদিকে লক্ষ রেখেই তিন তাঁর কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছিলেন। তাঁর এই অবদান জাতি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে দীর্ঘদিন স্মরণ করবে। বাঙালি মুসলমানের শিক্ষা সংস্কৃতি এবং সামাজিক অগ্রগতির ইতিহাস নির্মাণে তাঁর গবেষণা বাংলাদেশ সৃষ্টির আগেই দেশেবিদেশে গুরুত্বের সঙ্গে পঠিত এবং আলোচিত হয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অর্থমন্ত্রী পদে বৃত হয়েও তিনি সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন। দেশের একজন রাষ্ট্রদূত হিসেবে তাঁর সাফল্য প্রশংসনীয়। তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে বাংলা একাডেমীর এই স্মারকগ্রন্থ। এই গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন জাতীয় অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যামিরেটাস অধ্যাপক আসিুজ্জামান ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আতফুল হাই শিবলী। সম্পাদকদের সকলেই খ্যাতিমান। এই গ্রন্থে লিখেছেন দেশের ও বিদেশের খ্যাতিমান অধ্যাপক, রাজনীতিবিদ ও গবেষক। তাঁর জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা এবং তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি, বংশলতিকা, তাঁকে উৎসর্গ করা গ্রন্থের তালিকা, তাঁর রচনার নিদর্শন এবং তাঁর কিছু আলোকচিত্র। ড. এ. আর. মল্লিকের জীবনদর্শন ও কর্মপ্রয়াসকে বুঝতে এই গ্রন্থ কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে পারবে।
ইতিহাসবিদ-শিক্ষাবিদ ড. আজিজুর রহমান মল্লিক ১৯১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা জেলার রাজাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৪ সালে মানিকগঞ্জ মডেল হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৩৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আই.এ. পাশ করেন। ১৯৪০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগ থেকে বি.এ. (সম্মান) এবং ১৯৪১ সালে এম.এ. পাশ করেন। একই বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যােগদান । ১৯৪৩-১৯৫১ পর্যন্ত রাজশাহী কলেজে অধ্যাপনা। ১৯৫৩ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি ডিগ্রী লাভ। ১৯৫৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যােগদান। ১৯৬৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প পরিচালক ও পরে উপাচার্য হিসেবে যােগদান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে অসংখ্য বক্তব্য প্রদান করেন। ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা সচিব, ভারতে বাংলাদেশের প্রথম হাই কমিশনার এবং বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী। হাই কমিশনার থাকাকালীন সময়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়, পাকিস্তান থেকে বাঙালিদের ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি বিষয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগে যােগদান। ১৯৮৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে প্রফেসর এমেরিটাস করেন। ১৯৮৩১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমীর ফেলাে, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির সভাপতি এবং ১৯৮৩৮৪ ও ১৯৮৪-৮৫ সালে এশিয়াটিক সােসাইটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। তাঁর উল্লেখযােগ্য প্রকাশনা ' British policy and the Muslims in Bangal (1757-1856)। দুই পুত্র ও তিন কন্যার জনক ড. মল্লিক বর্তমানে অবসর জীবন-যাপন করছেন।