ভূমিকা একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। একজন শব্দ সৈনিক হিসেবে এই বেতার কেন্দ্র সংগঠন ও পরিচালনার সুযোগ আমার হয়েছিল। এ জন্য আমি মুজিবনগরে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রেস, তথ্য ,বেতার,চলচ্চিত্র এবং আর্ট ও ডিজাইন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত এম,এন,এ জনাব আব্দুল মান্নানের কাছে ব্যাক্তিগতভাবে ঋণী। আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি একাত্তরের স্বাধীনযুদ্ধে আমাদের সর্বপ্রধান প্রেরণা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুজিবনগরে গঠিত বিপ্লবী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম,প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ,অর্থমন্ত্রী ক্যাপটেন মনসুর আলী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামরুজ্জামানকে। রাজশাহী থেকে মুক্তাঞ্চলে পলায়ন ,স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগদান ও স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এস ঢাকায় জাতীয় বেতার কেন্দ্র পরিচালনার ভার গ্রহণ সহ প্রতিটি স্তরে একজন শব্দসৈনিক হিসেবে একাত্তরকে কিভাবে প্রত্যক্ষ করেছি, সেব স্মৃতিচারণই আমার আলোচ্য বই-এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসেবে বিবেচিত। এই বেতার কেন্দ্র একাত্তরের দীর্ঘ নয় মাস ধরে অমিত তেজ,ও জস্বিনী ভাষা আর দৃপ্ত কন্ঠে জঙ্গী অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে বাংলার আপামর জনগন ও এর অতন্দ্র প্রহরী মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বক্ষনিক প্রেরণা দিয়ে,শক্তি দিয়ে,সাহস দিয়ে,দিশেহারা মুক্তিকামী বাঙালীকে বিজয়ের সিংহদ্বারে পৌঁছে দিয়েছে। পৃথিবীর মানচিত্রে সংযোজন করেছে নতুন একটি দেশ-‘বাংলাদেশ’। বিশ্বের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এতবড় অবদান আর কোনও বেতার কেন্দ্র রাখতে পেরেছে কিনা আমার জানা নেই। যথার্থই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তৎকালীন সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর মুক্তির অগ্রদূত হিসেবে ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এর অনেক শব্দসৈনিক ইতোমধ্যেই হারিয়ে গেছেন আমাদের মাঝ থেকে। বাকীরাও একদিন হারিয়ে যাবেন এই ধরাধাম থেকে।শুধু থেকে যাবে তাঁদের অবদান। যাঁরা ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছেন,গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি তাদের অবদানকে।যাঁরা অতীতের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন আমাদের মাঝে , তাঁদের প্রতি রইল আমার অন্তর নিংড়ানো শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা। নামকরণ করেছেন বাংলাদেশ বেতারের মুখপত্র বেতার বাংলার প্রাক্তন সম্পাদক, বিশিষ্ট গীতিকার এবং কবি ফজল -এ-খোদা । মুক্তিযোদ্ধের গান সংযোজনায় মূল্যবান পরামর্শ রেখেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্র্রাথমিক পর্যায়ে প্রধান উদ্যোক্তা বিশিষ্ট লেখক এবং কবি বেলাল মোহাম্মদ। ধন্যবাদ জানাই তাঁদের উভয়কে। আবদুল বারী হাওলাদার পাণ্ডুলিপি সংশোধন থেকে সামগ্রিক সহযোগিতা করেছেন। তাঁর ঋণ অপরিশোধ্য। অনুপম প্রকাশণীর স্বত্বাধিকারী শ্রী মিলন নাথ বইটি প্রকাশে দায়িত্ব নিয়ে আমাকে কৃতার্থ করেছেন। তাঁকে জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। বইটি কম্পিউটার কম্পোজে আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছি দি বেঙ্গল প্রিন্টিং ওয়ার্ক থেকে । ধন্যবাদ জানাই প্রেসের ব্যবস্থাপক জনাব আবদুল লতিফ এবং কম্পিউটার অপারেটর জনাব সামসুর রহমানকে। বাংলার মানুষ সুখী হোক ,স্বাবলম্বী হোক,পৃখিবীর স্বাধীন জাতিসমূহের পাশে লাভ করুক একটি স্থায়ী সম্মানজনক আসন। শামসুল হুদা চৌধুরী তারিখঃফেব্রুয়ারি ২০০০ ৯৩৯,পূর্ব মনিপুর, মিরপুর,ঢাকা-১২১৬ সূচিপত্র *একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনে রাজশাহী থেকে বেতার কেন্দ্র ; মুক্তাঞ্চলে পলায়ন *ভগবানগোলা থেকে কলিকাতা; কলিকাতায় বাংলাদেশ মিশন; শপথনামায় স্বাক্ষর *স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শুভ উদ্ভেধন *স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বিস্তারিত অনুষ্ঠানমালা *ছন্ম পরিচয়ে ভাড়াটে বাড়িতে চার মাস *স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠানকে আরো জোরদার করার উদ্যোগ *বিজয় লাভ করলো বাংলাদেশ *ঘরে ফেরার প্রস্তুতি *যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ বেতার ,ঢাকা *ঢাকা বেতারের প্রধান হিসেবে তিন মাস; তৎকালীন সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে বঙ্গবন্ধুর সহগামী; অস্থির পরিবেশ ঢাকা বেতার *বালিগঞ্জের স্মৃতি *বরেন্দ্রভূমির স্মৃতি *স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত মুক্তিযুদ্ধের গান *পরিশিষ্ট