ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা ‘গুরু নানকের গল্প’ লেখাটি আমার দশ বছর আগের রচনা। এতদিন পাণ্ডুলিপিটি অযত্নেই পড়েছিল। পুরোনো লেখা ঘাটতে গিয়ে বছর খানেক আগে পাণ্ডুলিপিটি হঠাৎ একদিন হাতে এল এবং ছাপানোর কথাও মাথায় এল। ‘ছোটদের শরৎচন্দ্র’, ‘ছোটদের বঙ্কিমচন্দ্র’, ‘ছোটদের তীর্থঙ্কর মহাবীর’ বই তিনটি ইতঃপূর্বে মুক্তদারা, ঢাকা প্রকাশ করেছে। ভাবলাম ,ঐগুলোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কিশোর উপযোগী এই লেখাটিও প্রকাশ করা যেতে পারে। তবে এই পাণ্ডুলিপিতে বেশ কিছু অংশ নতুন সংযোজন।
শিখধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানক পাঞ্জাবের লাহোরের অদূরবর্তী তালওয়ান্দি (বর্তমান নানকানা) গ্রামে ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কালু বেদী এবং মাতার নাম ত্রিপতা। নানকের জীবন আগাগোড়াই ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। প্রথম থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি তাঁর বিরাগ ছিল। বিদ্যালয়ের শিক্ষা অপেক্ষা তিনি নির্জনে ও সাধুসঙ্গে দিন যাপন করতে বেশি পছন্দ করতেন।তবু তিনি ফারসী ভাষা ভালই আয়ত্ত করেছিলেন। ঈশ্বর ভক্তিমূলক ভজন গান তাঁর অতিশয় প্রিয় ছিল। সংসার -বিরাগী পুত্রকে সংসারের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য তাঁর পিতা মাতা কৈশোরেই তাঁর বিবাহ দেন । কিন্তু তাতে বিশেষ ফলোদয় হয়নি। কর্মজীবনে নানক কিছুকাল সুলতানপুরের নবাব সরকারের গুদাম রক্ষকের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। সমাজের নানা কুসংস্কার, অনাচার, অশিক্ষা, বৈষম্য তাঁকে নানাভাবে পীড়া দিতে থাকে। কি করলে মানুষের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল হবে, মানুষ ঈশ্বরভিমুখী হবে এই চিন্তা তাঁকে সর্বক্ষণ ঘিরে থাকে। সুলতানপুরে অবস্থানকালে একদিন তিনি নিকটস্থ বনে চলে যান এবং সমাধিস্থ অবস্থায় ঈশ্বরের প্রত্যাদেশ লাভ করেন। এরপর তিনি তীর্থভ্রমণে বের হন এবং ভ্রমণকালে তিনি পশ্চিমে মক্কা মদীনা বাগদাদ দক্ষিণে সিংহল ও ভারতবর্ষে আসাম গয়া কাশী কুরুক্ষেত্র বৃন্দাবন ও দিল্লী গমন করেন। ভ্রমণের শেষ শুরু নানক করতারপুরে এসে বসবাস করেন এবং ধর্ম প্রচার ও দীক্ষায় মনোনিবেশ করেন। মৃত্যুর অব্যবহিত পূর্বে তিনি তাঁর প্রধান শিষ্য অঙ্গদকে পরবর্তী শুরু মনোনীত করে যান। ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দে ৬৯ বছর বয়সে এই মহান মানব দরদী সাধকের দেহাবসান ঘটে।