ফ্ল্যাপে লেখা কথা এভারেস্ট বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশী মুসা ইব্রাহীমের জন্ম ১৯৭৭ সালের ২৪ জুলাই (স্কুল রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী ১ অক্টোবর, ১৯৭৯) বগুড়ায়, নানাবাড়িতে। তার দাদাবাড়ি লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী থানার দুর্গাপুর বসিনটারি-দিঘলটারী গ্রামে। বাবা মো. আনছার আলীর চিনিকলে বদলির চাকরির সুবাদে তার শৈশব কেটেছে রংপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায়। ছোটবেলা থেকেই তিনি নিজের চোখে বিশ্বকে দেখতে চেয়েছেন। সেই ইচ্ছা পূরণ করতেই তিনি সুযোগ পেলে সারাদিনের জন্য বাসা থেকে উধাও হয়ে যেতেন। ঠাকুরগাঁও চিনিকল উচ্চবিদ্যালয় থেকে তিনি এসএসসি (১৯৯৪) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ঢাকার নটর ডেম কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকে এএইচএসসি (১৯৯৬) পাস করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু এখানকার লেখাপড়া তাকে তেমন আকৃষ্ট করতে পারে নি। তাই পরের বছর পুনরায় ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে। এখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর (২০০৩) শেষ করেন। এরপর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাতেও স্নাতকোত্তর (২০১০) ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময়ই লেখালেখির নেশায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। এ সময় দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোয় সাংবাদিকতা করার সুবাদে সব ধরনের অ্যাডভেঞ্চার করার সুযোগ ঘটে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই পাহাড়ে-পর্বতে, দেশে-বিদেশের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। বর্তমানে অ্যাডভেঞ্চার করার মধ্য দিয়েই তিনি তারুণ্যের উন্মেষ দেখতে চান। পর্বতারোহণ, সাঁতার, সাইক্লিং, স্কুবা ডাইভিং, ম্যারাথন ইত্যাদি নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে তিনি নিজের সামর্থটাকে যাচাই করতে চান। সেই সঙ্গে সাংবাদিকতাটাও চলছে সমানতালে। যে লড়াই করে, তাকে হারানো যায় নাÑ এ কথাটি নতুন করে আবিষ্কার করেছেন মুসা ইব্রাহীম। বাংলাদেশের পাহাড়ে যাওয়ার সুবাদে এ দেশের বহু অ্যাডভেঞ্চারকারীর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। তাদের সঙ্গে পর্বতারোহণ একসময় তার কাছে ছিল নিছকই একটা শখ। ধীরে ধীরে সেটাই একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে দাঁড়িয়ে যায়। ২০০৭ সালে তিনি “ভিশন ২০১০: মিশন এভারেস্ট” স্লোগান নির্ধারণ করে ২০১০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশকে এভারেস্টজয়ী দেশ হিসাবে রূপান্তরিত করতে চেয়েছিলেন। এ সময়কালে তিনি বহু ধরনের বাধার মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু কোনোকিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারে নি। তার অদম্য মনোবল, ইচ্ছা ও সাহস বাংলাদেশকে ৬৭তম এভারেস্টজয়ী দেশে পরিণত করেছে ২০১০ সালের ২৩শে মে। এদিন বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ১৬ মিনিটে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টে লাল-সবুজ পতাকা ওড়ানোর পর থেকে এদেশের ১৬ কোটি মানুষ এখন এ নিয়ে গর্ব করেন। তার এই বীরত্বগাথা এই বইয়ে সন্নিবেশ করা হয়েছে। “পাহাড় চূড়ার হাতছানি: কেওক্রাডং থেকে এভারেস্ট” বইটিতে শুধু একেকটি পর্বতাভিযানের বর্ণনা দেয়া হয় নি। বরং প্রতিটি পর্বত চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে যাওয়ার সময় যে ধরনের প্রতিবন্ধকতা তাকে পার হতে হয়েছে, সেই সামর্থ্য অর্জনটাকেই তিনি জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া বলে বইয়ে উল্লেখ করেছেন।