স্বচয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁকে আশীর্বাণী দিয়েছিলেন, “আশাপূর্ণা তুমি সম্পূর্ণা”। জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার আগেই সাহিত্যিক হিসেবে তিনি পেয়ে গিয়েছিলেন সর্বভারতীয় খ্যাতি। অজস্র লেখার মাধ্যমে যখন জয় করেছেন অগণিত পাঠকের হৃদয়, তখনও আমাদের দেশে অধিকাংশ নারী ছিলেন পরদানশিন। তিনিও অন্তঃপুরে সংসারের সহস্র বন্ধনে বদ্ধ ছিলেন। বিদ্যালয়ের প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ লাভ করেননি জীবনে। সমস্ত দিক থেকেই আশাপূর্ণা দেবী এক বিস্ময়। নারীপ্রতিভা বিকাশের পক্ষে প্রতিকূল সমাজে নিরুচ্চারে তিনি রচনা করেছেন দেড় হাজারের বেশি ছোটগল্প, দেড়শোর বেশি উপন্যাস। প্রায় প্রতিটি ভারতীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর রচনা। বিদেশের প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর লেখা নিয়ে সম্পন্ন হয়েছে গবেষণাকর্ম। শতবর্ষে পা রেখেছেন আশাপূর্ণা দেবী। আজও তাঁকে নিয়ে পাঠকের প্রবল আগ্রহ। তাঁর কোনও কৃত্রিমতা নেই। ভারী ভারী তত্ত্ব নেই। হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছেন জীবন। সহজ, অকপট ভাষায় তারই স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন সাহিত্যে। যার মুখোমুখি হওয়া-মাত্র পাঠক • উপলব্ধি করেন, রক্তমাংসসহ উঠে আসছে আলো-অন্ধকারময় এক দেশ, কাল, মনুষ্যসমাজ। সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরী সেই কথাই বলেছেন, “চার দেওয়ালের খোলা জানালা থেকে দেখেও আশাপূর্ণা কত সহজে আমাদের এই দেশটাকে দেখতে পেতেন।” আনন্দ থেকে প্রকাশিত হল আশাপূর্ণা দেবীর ‘গল্পসংগ্রহ', যা কালোত্তীর্ণ এক সাহিত্যসম্পদ। আশাপূর্ণার শতবর্ষ উদ্যাপনের প্রাক্কালে প্রকাশিত হল অপরূপ এই আনন্দ-শ্রদ্ধার্ঘ্য।
Ashapurna Debi (৮ই জানুয়ারি, ১৯০৯ – ১৩ই জুলাই, ১৯৯৫) বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার ও শিশুসাহিত্যিক। ১৯২৪ সালে, মাত্র ১৫বছর ৮ মাস বয়সে কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা কালিদাস গুপ্তের সাথে বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জীবন, বিশেষত সাধারণ মেয়েদের জীবনযাপন ও মনস্তত্ত্বের চিত্রই ছিল তাঁর রচনার মূল উপজীব্য। ব্যক্তিজীবনে নিতান্তই এক আটপৌরে মা ও গৃহবধূ আশাপূর্ণা ছিলেন পাশ্চাত্য সাহিত্য ও দর্শন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞা। বাংলা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও ভাষায় তাঁর জ্ঞান ছিল না। বঞ্চিত হয়েছিলেন প্রথাগত শিক্ষালাভেও। কিন্তু গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও পর্যবেক্ষণশক্তি তাঁকে দান করে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখিকার আসন। তাঁর প্রথম প্রতিশ্রুতি-সুবর্ণলতা-বকুলকথা উপন্যাসত্রয়ী বিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রচনাগুলির অন্যতম বলে বিবেচিত হয়। তাঁর একাধিক কাহিনি অবলম্বনে রচিত হয়েছে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র। দেড় হাজার ছোটোগল্প ও আড়াইশো-র বেশি উপন্যাসের রচয়িতা আশাপূর্ণা সম্মানিত হয়েছিলেন জ্ঞানপীঠ পুরস্কার সহ দেশের একাধিক সাহিত্য পুরস্কার, অসামরিক নাগরিক সম্মান ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রিতে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে প্রদান করেন পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সম্মান রবীন্দ্র পুরস্কার। ভারত সরকার তাঁকে ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান সাহিত্য অকাদেমী ফেলোশিপে ভূষিত করেন। ১৯৯৫ সালে ১৩ জুলাই তিনি মৃত্যু বরণ করেন।