ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা একান্তিক আধিপত্যবাদী মানববিশ্বে মানবিকায়নের সমস্ত সূত্র বাণিজ্যিক মোড়কে ‘বিশ্বায়ন’-এর মুক্তবাজার ফেরি করে ফিরছে পুঁজিবাদীরা এখন। পরিণামে মানুষ বিচ্ছিন্ন, পণ্য ও প্রসাধনলিপ্ত হয়ে পড়েছে। মানবিক সত্তার তাৎপর্যহীনতায় বঙ্গভঙ্গির বহুরঙ্গিন ফাঁদে ও পরাশক্তির প্রতাপে ক্ষীণতর হয়ে আসছে মানবমুক্তির স্বর-শক্তি-সম্ভাবনা। এ অপ্রতিরোধ্য পতনের পথে নারীচেতনাবাদ আলোর বিকল্প দিগন্ত হিসেবে ধরে নিতে পারে সমূহ শৃঙ্খল থেকে মুক্তিকামী সর্বশ্রেণীর মানুষ।তাই নারীবাদ শুদু নয় নারী ও নারীবাদীদের। নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র-এর মধ্যকার বৈষ্যম্য ভেঙ্গে এগোবার অন্তর্নিহিত শক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে নারী চেতনাবাদে। এই ধারণাটা স্পষ্ট করার প্রচেষ্টা লেখকের।ছয়টি প্রবন্ধের প্রসঙ্গ পরিপ্রেক্ষিতের পৃতকতা অক্ষুন্ন থেকেও গ্রন্থের মৌল চিন্তাসূত্রের অন্বয় অন্বর্থ রয়েছে। সামাজিক সাংস্কৃতিক সকল প্রকার অসুখের মুখে নারীর অন্তর ও অবয়বের রক্ত-ক্ষতে বারাংবার পাঠকের সত্যদৃষ্টির দাবি উচ্চারিত হয়েছে শব্দে প্রতিশব্দে। লেখকের নতুন দৃষ্টিপাতের তীক্ষ্মতা প্রতিফলিত হয়েছে যথাপ্রযুক্ত নারী-পুরুষের মনস্তাত্বিক, সামাজিক সম্পর্ক বিশ্লেষণের নতুনত্বে। সাহসী, নির্মোহ, সত্যসন্ধা অস্তিত্বের ব্যত্যয় ঘটে নি কোথাও। পিতৃতান্ত্রিক ও পুঁজিতান্ত্রিক যৌথ প্রতাপের শৃঙ্খলে বন্দি নারী ও নিষ্পেষিত নারীপুরুষ নির্বিশেষ মানুষের প্রতি অপরিসীম প্রেম ও একাত্মতার প্রসূন যে এই পাঠকৃতি, তা তার অনাপোষ বয়ান-ভাষ্যে ও ভিন্নতর লেখন-শৈশীতে সমুদ্ভাসিত।
সূচিপত্র *পাঠকৃতি : নিঃস্বর নারী ও নারীচেতনাবাদ *সমাজ ও নিঃস্বর নারী *দারিদ্র্য ও নারী বঞ্চনা *নারীচেতনাবাদ ও আমাদের নারীসমাজ *বৈবাহিক নৈতিকতা : মানবিক সূত্রাবলি নিশ্চিহ্ন *পরিত্রাণহীন ‘পবিত্র’ বিবাহ * বৈবাহিক যৌন নৈতিকতা
জীবন ও জগতের কোনাে কিছুরই কোনাে পরিচয় সঠিক নয়, চূড়ান্ত নয়। এ মুহূর্তে আমার পরিচয় আমার চিন্তা, আদর্শিক অবস্থান, কৃত্য কিংবা এই রচনাকৃতির মধ্যে বিধৃত। পূর্ববর্তী ‘নিঃস্বর নারী ও নারীচেতনাবাদ’ বইটিতে, যা আমার প্রথম কৃতি, তাতে জন্মস্থান, ঠিকানা ইত্যাদিও বর্ণিত ছিলাে। এখন তা ছেলেমানুষী মনে হচ্ছে। কেনােনা ঐ বইটি যখন লেখার চেষ্টা করছিলাম তখন আমি বাস করতাম ধনী লােকদের পাশাপাশি, তাদের শুভদৃষ্টির সীমানায়। বৈদ্যুতিক সাদা আলাের নিচে দামি টেবিলের ওপর লেখার কাজ সেরেছিলাম। এ বই যখন লিখছিলাম, আমি একান্ত একাকী। স্বজনহীন, দিনে সূর্যের আলাে, রাতে কেরােসিনের অস্পষ্ট বাতির নিচে চাটাইয়ে বসে বসে লিখতে হয়েছে রাতে। তথাকথিত স্বজনরা নেই, দারিদ্রের সাথে তুমুল লড়ে চলেছি দেশের মধ্যবর্তী একটি জেলার দরিদ্র গ্রামের বাসিন্দা হিসেবে। কোনটি আমার প্রকৃত পরিচয়? জীবন নিরন্তর সংঘর্ষর্মান, পরিবর্তমান। চেতনাপ্রবাহে অবিরল যুক্ত হচ্ছে। অভিজ্ঞতার বিচিত্র অর্জন। আর সত্তা সতত সীমান্তহীন সম্ভাবনার দিকে সকল প্রকার অবরুদ্ধতা ভাঙতে ও বিনির্মাণে অবিচল।। স্মরণ করি মরিস ব্লশাের অসামান্য উক্তি : Writing Changes us, we do not write according to who we are; according to what we write.