‘অগ্নিপক্ষ’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ অগ্নিপক্ষ এমন একজন মানুষের জীবনকাহিনী, যাঁর নামের সঙ্গে আজ আসমুদ্র হিমাচল ভারতের জনসাধারণ এবং পৃথিবীর তাবৎ নাগরিক পরিচিত। এই মানুষটির প্রাণশক্তি প্ৰচণ্ড, চিন্তার জগৎ বহুব্যাপ্ত। সব সময়েই যে তাঁর সব কথা সহজেই বোঝা যায় তা নয়, কিন্তু তাঁর কথা প্রতিনিয়ত সতেজ ও সজীব। প্রতি মুহুর্তে নবীন, উদ্দীপ্ত। আবার তা বিচিত্র, বহুবৰ্ণে বর্ণময়। ভারতবাসীর প্রতি এই মানুষটির ভালবাসা অপরিসীম। যাঁরা সবচেয়ে নীচের তলার মানুষ, সবচেয়ে সরলপ্রাণ, তাঁদের প্রতি এক স্বাভাবিক সাযুজ্য বোধ করেন তিনি। কেননা নিজেকে তিনি তাঁদেরই একজন মনে করেন। তবু নিজের জীবনকথা আপামর মানুষের কাছে বলবেন কিনা এ নিয়ে তিনি দ্বিধাগ্ৰস্ত ছিলেন। কেননা, একটি ছোট্ট শহরের এক বালকের দুঃখ-কষ্ট, বাধা-বিঘ্ন, উত্তরণ, সাফল্য ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে মানুষ আগ্রহী হবে কেন? বিদ্যালয়-জীবনের দিনগুলিতে তীব্র আর্থিক অনটন, কলেজ-জীবনে অর্থাভাবে সেই মানুষটির নিরামিশাষীর জীবন বেছে নেওয়ার ইতিহাস জেনে মানুষের কী লাভ? দ্বিধাদ্বনন্দ্বের দোলাচলে অস্থির হয়েও সেই মানুষটির মনে হয়েছিল, কোনও ব্যক্তির জীবন এবং যে-সামাজিক বিন্যাসের মধ্যে সে-জীবন বিধৃত—এই দুইকে আলাদা করে দেখা যায় না। এই সত্যটি উপলব্ধি করার পর তাঁর মনে হল, বাবার ইচ্ছানুযায়ী কালেকটর না হয়ে, বিমানবাহিনীর বিমানচালক না হয়ে, কী করে তিনি ক্ষেপণাস্ত্র যন্ত্রবিদ হলেন, সেই জীবনের ইতিহাস মানুষকে হয়তো বলা যায়। বলা যায় তাঁদের কথাও, যাঁদের গভীর প্রভাবে ও প্রেরণায় গড়ে উঠেছে তাঁর জীবন, সফল হয়েছে তাঁর আকাঙ্ক্ষা প্ৰত্যাশা স্বপ্ন। এই প্রত্যয়ে স্থিত হয়ে তিনি তাঁর জীবনের এক একটি পৃষ্ঠা মানুষের সামনে মেলে ধরলেন। হয়তো এই গ্ৰন্থ মানুষটির বর্ণময় জীবনের রূপরেখা মাত্র। তবু এই জীবনকথা এক তীর্থযাত্রা। তাঁর অন্তঃস্থিত ‘ঐশ্বরিক অগ্নি’-র ডানা মেলে আকাশের বুকে উড়ে যাওয়ার আশ্চৰ্য বৃত্তান্ত। আবার এ শুধু তাঁর ব্যক্তিগত সাফল্য ও দুঃখদুর্দশার কাহিনী নয়। যে-আধুনিক ভারত এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সামনের সারিতে স্থানলাভের জন্য সংগ্ৰাম করছে, তার নানা সফলতা এবং অসফলতার দলিলও এই বই।
আবুল পাকির জয়নুল-আবেদিন আব্দুল কালাম (১৫ অক্টোবর ১৯৩১ - ২৭ জুলাই ২০১৫) ছিলেন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একাদশ রাষ্ট্রপতি (২০০২২০০৭)। কালাম তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একজন বিজ্ঞানী হিসেবে। পরে তিনি ঘটনাচক্রে রাজনীতিবিদে পরিণত হন। কালামের জন্ম অধুনা ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রামেশ্বরমে। তিনি পদার্থবিদ্যা ও বিমান প্রযুক্তিবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। এরপর চল্লিশ বছর তিনি প্রধানত রক্ষা অনুসন্ধান ও বিকাশ সংগঠন (ডিআরডিও) ও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় (ইসরো) বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান প্রশাসক হিসেবে কাজ করেন। ভারতের অসামরিক মহাকাশ কর্মসূচি ও সামরিক সুসংহত নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে তিনি অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত ছিলেন। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও মহাকাশযানবাহী রকেট উন্নয়নের কাজে তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে ‘ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র মানব’ বা ‘মিশাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’ বলা হয়। ১৯৯৮ সালেপোখরান-দুই পরমাণু বোমা পরীক্ষায় তিনি প্রধান সাংগঠনিক, প্রযুক্তিগত ও রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেন। এটি ছিল ১৯৭৪ সালে স্মাইলিং বুদ্ধ নামে পরিচিত প্রথম পরমাণু বোমা পরীক্ষার পর দ্বিতীয় পরমাণু বোমা পরীক্ষা।২০০২ সালে কালাম তৎকালীন শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টি ও বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পাঁচ বছর এই পদে আসীন থাকার পর তিনি শিক্ষাবিদ, লেখক ও জনসেবকের সাধারণ জীবন বেছে নেন। ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছিলেন কালাম।