"পথের কবি" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: যিনি পথের পাঁচালী-কার, তিনিই পথের কবি। অর্থাৎ বিভূতিভূষণ। প্রকৃতি তাঁর রচনায় শুধু শােভাময়ী নয়, বাত্ময়ী। প্রকৃতির শরীরী উপস্থিতি যেন টের পাওয়া যায় তাঁর বর্ণনায়। যাঁর রচনায় সহজ-সরল মরমী কাব্যময়তা, তাঁর জীবন কিন্তু দুর্বোধ আর জটিল। সেই জটিল, মিস্টিক জীবনেরই গ্রন্থিমােচন এ-গ্রন্থের পাতায়-পাতায়। পথের কবি বিভূতিভূষণের চলার পথের দু-ধারে যে-অজস্র ঘটনার ফুল আর কাঁটা ছিল ছড়ানাে, দুর্লভ নিষ্ঠায় আর দুস্তর পরিশ্রমে সেই সমস্তকিছুকে সযত্নে কুড়িয়ে নিয়েছেন জীবনীকার কিশলয় ঠাকুর, উন্মােচিত করেছেন বহির্জীবন ও অন্তৰ্জীবনের এক অসামান্য আলেখ্য। বিভূতিভূষণের সমকালের ভদ্রেতর মানুষজন, শিল্পী-সাহিত্যিক পরিমণ্ডল, একাধিক প্রেমার্থিনী-অনুরাগিণীর উজ্জ্বল আবিভাব— এসব কথা যেমন অকপটভাবে এই গ্রন্থে, তেমনই বিভূতিভূষণের বিভিন্ন রচনার পশ্চাৎপট বা নেপথ্যকাহিনী, তাঁর অতীন্দ্রিয় অনুভূতি, অলৌকিকদর্শন আর প্রয়াণরহস্যের নানা অজ্ঞাত কথাও ত্রিমাত্রিক চলচ্ছবির মতাে এ-গ্রন্থে উদ্ভাসিত। বিভূতিভূষণ সম্পর্কে বহু অন্তরঙ্গ স্মৃতিসাক্ষ্য ও দুষ্প্রাপ্য সাক্ষাৎকার এবং তাঁর ঘটনাঘন জীবনের ক্যামেরাসাক্ষী বহু দুর্লভ আলােকচিত্র এ-বইয়ের অতিরিক্ত আকর্ষণ। প্রচলিত অর্থে আত্মকথা লিখে যাননি পথের কবি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিল কিছু নােটবুক আর দিনলিপির টুকরাে পাতা। ছিন্নবিচ্ছিন্ন সেইসব সূত্র ধরে বিভূতিভূষণের জনজীবন ও মনােজীবনের পরিচয়দীপ্ত পূর্বাপর যে-জীবনী রচনা করেছেন কিশলয় ঠাকুর তা শুধু নিখুঁত এক চিত্ৰণই নয়, বাংলা জীবনীসাহিত্যেও এক অপ্রতিম দিকচিহ্ন। বিভূতিভূষণের জন্মশতবর্ষের অনুষঙ্গে নতুন চেহারায় পুনর্মুদ্রিত হল এই একদা-সাড়াজাগানাে গ্রন্থ।