“দশটি উপন্যাস” বেইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপ এর লেখা: সাম্প্রতিক বাংলা উপন্যাসের স্বরূপসন্ধান করে সুধী সমালােচক দেখিয়েছেন, “সময়ের হাত পড়েছে গত কয়েক বৎসরের বাংলা উপন্যাসে। ব্যক্তি ও সমাজের অন্বয়ে অনন্বয়ে, সংঘাতে ও সংযােগে ব্যক্তিস্বরূপ উদ্ভাসিত হয়েছে। নানাভাবে বাস্তবের সমস্যা ও শিল্পের সমস্যাকে একই প্রেক্ষিতে স্থাপন করে, স্বরমাত্রায় নানা লয়, নানা স্তর আরােপ করে লেখকরা প্রতিফলিত করতে চেয়েছেন আজকের সময়ের, সমাজের তথা জীবনের চলচ্ছন্দকে। পাল্টে যাচ্ছে গল্প বলার ধরতাই, বুনুনি ও বিন্যাসের ধারা ধরন।” কথাসাহিত্যের এই প্রেক্ষাপটে বাণী বসুর আবির্ভাব ধীর অথচ দৃঢ় পদক্ষেপে। সময়ের হিসেবে আশির দশক। প্রথমে ছােটগল্প রচনায় তাঁর আশ্চর্য সিদ্ধি, তারপর উপন্যাসে তাঁর অপার সম্ভাবনার প্রতিষ্ঠা। শুরু থেকেই তিনি রসপিপাসু এবং মনােযােগী পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ। করেছেন। বাণী বসু তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘জন্মভূমি মাতৃভূমি’-তেই প্রমাণ করতে পেরেছিলেন যে, নিছক গল্প লেখার জন্য তিনি কলম ধরেননি। নানা দিক থেকে আলাে ফেলে আমেরিকা ও ভারত—এই দু’দেশের পটভূমিতে এক লক্ষ্যভেদী ও হৃদয়স্পর্শী মৌলিক কাহিনী রচনা করেছিলেন। দ্বিতীয় উপন্যাস থেকে বাণী বসুর স্বাতন্ত্র্য সম্বন্ধে পাঠককে আর নতুন করে ভাবতে হয়নি। এযাবৎ প্রকাশিত তাঁর সমস্ত উপন্যাস বিষয়বৈচিত্র্যে অভিনব। দুর্লভ বিষয়-জ্ঞান এই লেখিকার সহজাত। সমসাময়িক রাজনীতিকে বিষয় করে এক বক্তব্যগাঢ় উপন্যাস কিংবা একেবারে বিপরীতে এক নারী সংগীতশিল্পীর সংগ্রাম, সঙ্কট ও জীবনবেদ নিয়ে কথাসাহিত্য রচনায় তিনি সমান স্বচ্ছন্দ। ব্যক্তির অভিজ্ঞানের সঙ্গে তথ্যসমৃদ্ধ। ইতিহাস ও সমাজতত্ত্বকে অনায়াসে তিনি মিশিয়ে দিতে পেরেছেন। আবার প্রতিটি উপন্যাসের আঙ্গিকনির্মাণে ও ভাষারচনায় তাঁর পারঙ্গমতা ঈর্ষণীয়। বাংলা উপন্যাসের সাম্প্রতিক। তরঙ্গমালায় বাণী বসু এক অপরিহার্য নাম। জীবনের প্রতি দায়বদ্ধতায় এবং পাঠকের প্রতি দায়িত্ববােধে তিনি বিশিষ্ট জন্মভূমি মাতৃভূমি, অন্তর্ঘাত, পঞ্চম পুরুষ, উত্তরসাধক, বৃত্তের বাইরে, কিনার থেকে কিনারে, দিদিমাসির জিন, মেয়েলি আড্ডার হালচাল, রাধানগর ও অমৃতা—এই দশটি ভিন্নস্বাদের উপন্যাস নিয়ে প্রকাশিত হল বাণী বসুর ‘দশটি উপন্যাস।
বাণী বসু একজন বাঙালি ভারতীয় লেখক, লেখক, সমালোচক এবং কবি। তিনি বিখ্যাত স্কটিশ চার্চ কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষালাভ করেন। তিনি জন্মভূমি মতিঝুমির প্রকাশনার সাথে উপন্যাস লেখক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। একজন প্রফুল্ল লেখক, তাঁর উপন্যাসগুলি নিয়মিত বাংলার প্রখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা দেশে প্রকাশিত হয়। তার প্রধান কাজগুলির মধ্যে রয়েছে সোয়েথ পাঠেরার থালা (মার্বেল সালভার), একুশে পা (একুশের ধাপ), মৈত্রেয়া যাকাত (স্ট্রি দ্বারা মৈত্র্যের জন্ম হিসাবে প্রকাশিত), গান্ধারভি, পঞ্চম পুরুষ (পঞ্চম পুরুষ, বা পঞ্চম প্রজন্ম?) এবং অষ্টম গর্ভা (অষ্টম গর্ভাবস্থা)। তিনি আন্তরঘাট (ট্রেজন), এবং মৈত্র্য্য জাট্টা জন্য আনন্দ পুরষ্কারের জন্য তারশঙ্কর পুরষ্কার জিতেছিলেন। তিনি সুশিলা দেবী বিড়লা পুরস্কার এবং সাহিত্য সেতু পুরস্করের প্রাপক। তিনি ব্যাপকভাবে বাংলাতে অনুবাদ করেন এবং প্রবন্ধ, ছোট গল্প এবং কবিতা লিখেছেন। বঙ্গ বসুকে বাংলা সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য, ভারতের একাডেমীর সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার, সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার ২010 প্রদান করা হয়েছে।