"নদেয় এল বান" বইটির কিছু অংশঃ ‘রক্ত! রক্তের দোষ কোথায় যাবে? যতই আগলে রাখো, সরিয়ে রাখো, রক্তের ধারা ফুটে বের হবেই! বাবার কণ্ঠ থেকে হতাশা, রাগ, বিরক্তির এক অচেনা চেহারা যেন ঘৃণা হয়ে বেরিয়ে আসছিল। আমার পড়ার ঘর থেকে শুনতে পাচ্ছিলাম, রান্নাঘরে বসে মা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে আর নাক টানছে! সন্ধ্যা নেমে আসছিল দ্রুত। গোপাল ঠাকুরের বাড়ির মন্দিরের সন্ধ্যারতির কাঁসরের শব্দ পাচ্ছিলাম। কিছুদিন আগে পর্যন্ত ওই কাঁসরের শব্দই ছিল আমাদের বিকেলের খেলা শেষ করার সাইরেন। বাবার কড়া নির্দেশ ছিল, গোপাল ঠাকুরের বাড়ি কাঁসর বাজলেই যেন ঘরে ফিরি। সেই কাঁসর বাজছিল ঠিকই, আমি তার অনেক আগেই বাড়িতে ফিরেছি, তবুও, অনেক-অনেকদিন পরে সেদিন বাবার হাতে প্রচণ্ড মার খেলাম! মার খাওয়ার বয়স আমার ছিল না বললেই চলে— গলার স্বরে বয়সের ছোঁওয়া লেগে রিনরিনে মেয়েলি ভাবটা চলে গেছে, নাকের নীচে সবজে রঙের আভাস লেগেছে, সেলুনের সুবলদা ছােট করে চুল ঘেঁটে দিলে মনে খুব রাগ হয়। ক্লাস নাইন থেকে টেনে-এ ওঠার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা এখনও আছে। লম্বা ফরসা একটু রুষ্ণ চেহারার অলস আরামপ্রিয় বাবার ভিতরে যে এত রাগ-ঘৃণা থাকতে পারে, জানা ছিল না। না পড়ার জন্য বাবার হাতে বিস্তর চড়চাপড় খেয়েছি আগে, কিন্তু সেদিনের ব্যাপারটা ছিল অন্যরকম। আমি মার খেলাম—বলতে লজ্জা করারই কথা—আমার অতি প্রিয় এক রমণীর সঙ্গে আমার নাম জড়িয়ে যে-কথা বাবার কানে এসেছিল, সেজন্য সত্যিমিথ্যে খোঁজখবর না নিয়েই বাবা আমাকে গোরুর মতো পেটাল! আর আমার সঙ্গে কার নাম জড়িয়ে পেটাল ? ভাবলেই অভিমানে গলা বুজে আসছিল.......