"বেগম মেরী বিশ্বাস (অখণ্ড)" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: বিমল মিত্রের এই সুদীর্ঘ ঐতিহাসিক উপন্যাসে এমন এক সময়ের কথা বলা হয়েছে, যখন সমগ্র হিন্দুস্থানে একটা বিরাট অবক্ষয়ের প্রবল স্রোত বহমান; দিল্লির বাদশা ক্ষমতাহীন, বীরের জাত রাজপুতরা নির্বীর্য, সিংহবিক্রম মরাঠারা ক্লান্ত এবং পূর্বপ্রান্তে বিদেশি বণিকরা চক্রান্তে লিপ্ত। ইতিহাসের সেই সন্ধিক্ষণে একটি সামান্য মেয়ে বাংলার হাথিয়াগড়ের মতাে এক অখ্যাত জনপদ থেকে বেরিয়েছিল ঘটনাচক্রের অমােঘ বিধানে। তার বিদ্যা ছিল না, বুদ্ধি ছিল না, সহায় সম্বল কিছুই ছিল না। সে বেপরােয়া নয়, তবে আত্মবিশ্বাসী। ভাবীকালের ইতিহাস-বিধাতা তাকে আশা-ভরসাহীন এক অবক্ষয়ের ঘূর্ণিতে যেন ছুড়ে ফেলে দিলেন। মেয়েটি হারিয়ে গেল না, বরং ঘুরে দাড়াল। তারপর কেমন করে যেন হিন্দুস্থানের রাষ্ট্রবিপ্লবের সঙ্গে একাত্মভাবে জড়িয়ে গেল তার ভাগ্য। চোখের সামনে ভাগ্যবিধাতার পরিহাস দেখল সে, অর্থগৃধুতার চরম বিকাশ দেখল, লালসার অনির্বাণ জ্বালানল দেখল। তারপর একদিন এই আগুনে আত্মাহুতি দিল মেয়েটি। এপিকধর্মী এই ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘বেগম মেরী বিশ্বাস’ সেই সাধারণ মেয়েটিকে উপলক্ষ করে অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলা দেশের রাষ্ট্রবিপ্লবের এক বিপুল বিচিত্র ও মহান চিত্রায়ণ।
Bimal Mitra কথাসাহিত্যিক বিমল মিত্রের জন্ম ১৯১২ সালের ১৮ই মার্চ। চেতনা স্কুল ও আশুতোষ কলেজে শিক্ষালাভের পর তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ পাশ করেন ১৯৩৮ সালে । গোড়ায় গান লেখার শখ ছিল । বিখ্যাত গায়করা তাঁর গানে সুর দিয়েছিলেন। পরে তিনি কথাসাহিত্য রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। প্রথম জীবনে রেল বিভাগে চাকরি করতেন। তারপর সে গল্প-উপন্যাস প্ৰবন্ধ নিয়ে তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা একশতরও অধিক। বাংলা ১৩৭০ সালে তার সরকার রবীন্দ্র-স্মৃতি পুরস্কারে সংবর্ধিত করেন। এই উপন্যাসটি এখনও পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের বৃহত্তম এবং সর্বোচ্চ মূল্যবান উপন্যাস। তবে সাহিত্য পুরস্কার লাভের থেকেও বিমল মিত্র সম্বন্ধে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল বঙ্গভাষার সাহিত্যিকদের মধ্যে শরৎচন্দ্রের পর তিনিই সর্বভারতীয় সাহিত্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় ছিলেন । তিনি বেগম মেরী বিশ্বাস, সাহেব বিবি গোলাম, কড়ি দিয়ে কিনলাম, একক দশক শতক, পতি পরম গুরু, এই নরদেহ-এপিক উপন্যাসের মাধ্যমে তিনশো বছরের সমাজজীবনের এক বিস্তৃতকালের চালচিত্র বাংলা সাহিত্যকে উপহার দিয়েছেন । ১৯৯১ সালের ২রা ডিসেম্বর তার তিরোধান হয় ।