"বিজলিবালার মুক্তি" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: জয় দত্ত স্ট্রিটের বিজলিবালা পাড়ার কারও মাসিমা, কারও দিদিমা। সকলের সঙ্গে তার ভাব, মেলামেশা। উত্তর কলকাতার এই পাড়ায়। তার জীবন কেটে গেল পঞ্চাশ বছরের ওপর। রথের দিন কাজের মেয়ে পদ্মকে নিয়ে বেরিয়ে টানা রিকশা উল্টে পা ভাঙলেন বিজলিবালা। বিছনায় শয্যাশায়ী এই প্রবীণাকে ঘিরে এরপর ঘটতে থাকে নানা ঘটনা, দুলতে থাকে এক দীর্ঘসময়। তার বাড়ির নীচতলার ভাড়াটিয়া জ্যোতি ও হাসির জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। চোদ্দোমাস বয়সের সন্তান ভুটুকে রেখে হাসি ক্যান্সারে মারা গেল। ভুটুকে কোলে তুলে নিলেন বিজলিবালা। কিন্তু হঠাৎ একটি চিঠির সূত্রে। উদঘাটিত হল হাসির আসল নাম হাসিনা, সে ছিল মুসলমানের মেয়ে। জ্যোতি স্বীকার করে নেয় এই সত্য। অথচ এই হাসি বিজলিবালার ঠাকুর ঘরে ঢুকে নারায়ণ শিলা ছুঁয়েছে, বিজলিবালার কাছে লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়েছে! এক আত্মিক সংকটের বাতাবরণ তৈরি হয়। কিন্তু রূঢ় বাস্তব ও সমসময়ের নানা অভিঘাতকে পরাজিত করে বিজলিবালা মানবিকতার সিংহাসন জয় করে নেন। কিন্তু কীভাবে? তারই অপরূপ ও স্মরণীয় উপাখ্যান ‘বিজলিবালার মুক্তি।
অষ্টআশি বছরের বিপত্নীক কাশীনাথ নিজেকে তিন প্রজন্মবাহিত একটি সংসারের ধারক-বাহক ও নিয়ন্ত্রক মনে করেন। তাঁর চড়া মেজাজ ও রুক্ষ ব্যবহারে সবাই তটস্থ ও বিরক্ত। কাশীনাথের নাতি অনীশ ও নাতবউ বলাকা এই প্রজন্মের মানুষ। ওদের কাছে ঐতিহ্য, প্রাচীন মূল্যবােধ, প্রথা-প্রকরণ একান্ত গুরুত্বহীন। এ নিয়ে কাশীনাথের সঙ্গে তাদের সংঘাত লেগেই আছে। কাশীনাথের পুত্র পুলিন এবং তার স্ত্রী ভারতী প্রবীণ ও নবীন প্রজন্মের মাঝখানে যেন সংযােগ-চিহ্ন। পুলিনের ভেতর একটা অপরাধবােধ কাজ করে। বাবার দেওয়া টাকায় ব্যবসা করতে গিয়ে পুলিন ব্যর্থ হয়েছে। শ্বশুরের কাছে স্বামীর নিত্য লাঞ্ছনা দেখে, একরকম জেদ করেই ভারতী নিজের ছেলেকে অন্যভাবে মানুষ করেছে। অনীশকে দ্বিতীয় পুলিন হতে দেয়নি। কাশীনাথ সব বুঝতে পেরেও, নিজেকে বদলাননি। বরং অদৃশ্য যুদ্ধ চালিয়েই যাচ্ছেন পরবর্তী প্রজন্মের সঙ্গে। কিন্তু পুলিন বা ভারতী কি কখনও ভেবেছিল আপাত-রুক্ষ এই বুড়াে লােকটি’র। অন্তরে প্রবহমান স্নেহের ফল্গুধারায় একদিন তারা সিক্ত, শান্ত ও স্থিত হবে?
Moti Nandi ( জন্ম: ১০ জুলাই ১৯৩১ - মৃত্যু: ৩ জানুয়ারি ২০১০) ছিলেন ভারতের কলকাতা ভিত্তিক একজন বাঙালি লেখক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মতি নন্দী ছিলেন মূলত ক্রীড়া সাংবাদিক এবং উপন্যাসিক ও শিশু সাহিত্যিক। তিনি আনন্দ পুরস্কার এবং সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেছেন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস 'কোনি'।