বাংলা ভাষায় শারদীয় সংখ্যার শুরু সেই সুলভ সমাচার থেকে। বস্তুত সেই থেকেই বাংলায় সৃজন সাহিত্যের সূত্রপাত। বাংলা ছোটগল্পের বিকাশের সঙ্গে পত্র-পত্রিকার চাহিদার যোগ যে কত সুনিবিড় তা সাহিত্য-পাঠকের কাছে অজানা নয়। পত্র-পত্রিকার স্থান সংকীর্ণতার শাসনে নিয়ন্ত্রিত হয়ে, মাত্রই গত শতকে, এই মহাপৃথিবীতে সন্দর্ভ সাহিত্যের স্থান দখল করে নিয়েছে এই নতুন শিল্প-মাধ্যমটি। এ কথা অত্যুক্তি নয়, কবিতার মতো ছোটগল্পের ক্ষেত্রেও বাংলা সাহিত্যের যাবতীয় গর্ব ও সমৃদ্ধি বিশ্বসাহিত্যের সমকক্ষতায়। আর এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে শারদীয় দেশ। যে শারদীয় সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে প্রকাশিত হচ্ছে বছরের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য সম্ভার নিয়ে এবং যার পৃষ্ঠায় এ-যাবৎকাল স্থানপ্রাপ্ত ছোটগল্পের সংখ্যা প্রায় সহস্রাধিক, বাংলা ছোটগল্পের ক্ষেত্রে সে-পত্রিকার পৃষ্ঠপোষকতার ভূমিকা যে কতখানি তা সহজেই অনুধাবন যোগ্য। অনুধাবন করছেন এ যুগের গবেষক সমালোচকরাও| তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্ধশতক অতিক্রান্ত সাহিত্য-শিল্পের আধার দেশ পত্রিকা। শুধু তাই নয় লেখকরা যেমন তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ গল্পটি লিখে থাকেন শারদীয় দেশ পত্রিকায় তেমনি, পাঠকরাও সারাবছর ধরে অপেক্ষা করে থাকেন এই শারদীয় সংখ্যাটির জন্য। পয়তাল্লিশ বছরের শারদীয় দেশ পত্রিকা থেকে পঞ্চান্নটি গল্প বেছে নিয়ে প্রকাশিত হল দেশ : শারদীয় গল্প সংকলন। পঞ্চান্নটি গল্প তো নয়, এ যেন বিশাল সমুদ্র ছেঁচে দুর্লভ ও মহামূল্য পঞ্চান্নটি রত্ন তুলে আনা। বলা বাহুল্য একাজ খুব সহজসাধ্য নয়। কারণ শারদীয় দেশ পত্রিকার প্রতিটি গল্পই যেন হীরের টুকরো। বর্তমান বাংলা সাহিত্যের যাঁরা স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব, তাঁদের অনেকেই অলংকৃত করেছেন শারদীয় দেশ-এর পৃষ্ঠা। দলমত নির্বিশেষে যোগ্য লেখকের যোগ্য রচনা প্রকাশ করাকেই এ-পত্রিকা পবিত্র কর্তব্য বলে মনে করেছে। এই সংকলন তাই আধুনিক বাংলা ছোটগল্পের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, উজ্জ্বলতম দর্পণ। প্রবীণ ও নবীন লেখকদের এক বিরল ও অপরিহার্য সংগ্রহ এই দেশ : শারদীয় গল্প সংকলন।
Sagarmoy Ghosh (২২ জুন, ১৯১২ - ১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৯) একজন স্বনামখ্যাত ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক যিনি কলকাতা থেকে প্রকাশিত দেশ পত্রিকার সম্পাদকীয় দায়িত্ব পালন করে জীবন্ত কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছিলেন। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যুতে লন্ডনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত শোকসংবাদে তাকে বাংলার ‘সাহিত্য ব্যাঘ্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। মৃত্যুর কিছু পূর্বে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘজীবী বাংলা সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।