“আইন-শব্দকোষ" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ বাংলাভাষায় আইনচর্চার ক্ষেত্রে আইন-শব্দকোষ একটি অভিনব প্রচেষ্টা। ইহাতে প্রায় ৬০০০। ভুক্তি আছে। ভুক্তি নির্বাচিত হইয়াছে মূলত বাংলাদেশের সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ আইন হইতে। তবে ঐতিহাসিক পটভূমি ও বর্তমান প্রাসঙ্গিকতার কারণে ইংরাজি আইন, ইউরােপীয় আইন ও । আন্তর্জাতিক আইন এবংঅর্থনীতি ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক অনেক ভুক্তি ইহাতে গৃহীত হইয়াছে ।। দেশি-বিদেশি আইনবিশারদদের রচনার সাহায্যে প্রতিটি ভুক্তি সুস্পষ্টরূপে ব্যাখ্যাত হইয়াছে, এক। ভুক্তিতে প্রায়শই নির্দেশ করা হইয়াছে অপর প্রাসঙ্গিক ভুক্তির। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক নজিরের । উল্লেখ রহিয়াছে। ইতিমধ্যে নির্মিত ও প্রচলিত পারিভাষিক শব্দের সহিত যুক্ত হইয়াছে কিছু নূতন । প্রণীত ও উদ্ভাবিত শব্দ। নির্ঘণ্টে ভুক্তিগুলির বাংলা সমার্থশব্দ সংকলিত হইয়াছে— তৎসংলগ্ন। ইংরাজি শব্দদ্বারা মূল ভুক্তির সন্ধান পাওয়া যাইবে ।জুরূহতার জন্যজ্জাইনি ভাষার কিছু দুর্নাম । আছে, তবে এই কোষগ্রন্থের ভাষা যথেষ্ট সরল ও সহজবােধগম্য । বাংলাদেশে কর্মরত কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন-সংস্থার (CIDA) আইনি সংস্কার প্রকল্পের। প্রথম ভাগ এবং হার নির্বাহীরূপে কানাডার বিচার বিভাগের উদযােগে আইন-শব্দকোষ-প্রণয়নের পরিকল্পনা গহীত হয়। ইহার আশু লক্ষ্যভ্রংলাভাষার আইন-প্রণয়নের বিদ্যমান ধারাকে সাহায্য ও পুষ্ট করা। আশা করা যায়, আইন-শব্দকোষ কেবল আইনপ্রণেতা ও আইনের খসড়া-। রচয়িতাদের নয়, আইনের ছাত্র ও শিক্ষক, আইনজীবী ও বিচারক, অন্যান্য পেশাজীবী এবং আইনে উৎসাহী সাধারণজনের কৌতূহল ও প্রয়ােজন নিবৃত্ত করিবে ।
আনিসুজ্জামান একাধারে একজন বরেণ্য শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক, ভাষা সংগ্রামী, সংবিধানের অনুবাদক এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক। এককথায় তিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। এই গুণীজন ১৯৩৭ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে এক উচ্চশিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বর্ণাঢ্য শিক্ষাজীবন শুরু হয় কলকাতার পার্ক সার্কাস হাই স্কুল থেকে। কৈশোরে পরিবারসমেত বাংলাদেশে চলে আসলে খুলনা শহরের এক স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে ঢাকার প্রিয়নাথ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৫৩ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন আনিসুজ্জামান। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। স্নাতক জীবনে তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং ড. মুনীর চৌধুরীর মতো কিংবদন্তি শিক্ষকদের, যাদের সান্নিধ্যে তিনি নিজেকে গড়ে তোলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শুরু করেন এবং ১৯৬৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন। অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য বিভিন্ন সময়ে তিনি বেশ কিছু বৃত্তি লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি শরণার্থী শিক্ষকদের সংগঠন 'বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি'র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পে অংশ নেন এবং 'কমনওয়েলথ অ্যাকাডেমি স্টাফ ফেলো' হিসেবে লন্ডন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করেন। বর্তমানে তিনি শিল্প ও সাহিত্যকলার বিভিন্ন শাখায় জড়িত আছেন। আনিসুজ্জামান এর বই সমগ্রতে তার প্রখর চিন্তাশক্তি ও বিশ্লেষণী ক্ষমতার পরিচয় মেলে। আনিসুজ্জামানের বইগুলো বেশিরভাগই গবেষণা এবং প্রবন্ধধর্মী। আনিসুজ্জামানের প্রবন্ধ এবং গবেষণা গ্রন্থগুলো হচ্ছে ‘মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য’, ‘আমার একাত্তর’, ’সোশ্যাল এস্পেক্টস অব এন্ডোজেনাস ইন্টেলেকচুয়াল ক্রিয়েটিভিটি’ ইত্যাদি। আনিসুজ্জামান এর বই সমূহ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো 'সাহিত্যে ও সমাজে', 'কালচার এন্ড থট', 'নারীর কথা', 'আইন-শব্দকোষ' ইত্যাদি। তিনি অসংখ্য পদক-পুরস্কার এবং সম্মাননা লাভ করেছেন। সেসবের মধ্যে ১৯৭০ সালে প্রবন্ধ-গবেষণার জন্য ‘বাংলা অ্যাকাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ১৯৮৫ সালে শিক্ষায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ‘একুশে পদক’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ২০০৫ সালে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘ডি.লিট’ ডিগ্রি প্রদান করে। ২০১৪ সালে তিনি ভারত সরকার প্রদত্ত 'পদ্মভূষণ' পদক লাভ করেন।