"কন্যা জায়া ও জননী" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: এমন এক বিষয় নিয়ে বই, যার সম্পর্কে বাংলা ভাষায়, বলা যায়, এই প্রথম লেখা হল। আর এ-বই লিখেছেন এমন এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যাঁর জীবনের পেশাগত অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে বহুগুণ মূল্য যুক্ত করেছে। স্বাধীনতার পর থেকেই মােটামুটিভাবে এ-দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামােয় ব্যাপক পরিবর্তন। স্ত্রী-শিক্ষার প্রসার ও স্ত্রী-স্বাধীনতার অগ্রগতি আজ আর বিলাস নয়, প্রয়ােজনীয় অঙ্গ। মেয়েরা শুধুই কন্যা, জায়া ও জননী রূপে সংসার আলাে করছেন না, জীবিকার সংস্থানেও বহুক্ষেত্রে তারা সমানভাবে এগিয়ে আসছেন। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মেয়েদের নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতনতার প্রয়ােজন দেখা দিয়েছে। অথচ উচ্চশিক্ষিত মেয়েদের মধ্যেও বিভিন্নমুখী জ্ঞান বাড়লেও এ-সম্পর্কে জ্ঞান নিতান্ত অগভীর। নিজের পেশার ক্ষেত্রে ডা. মিত্র অহরহ এই জাতীয় ব্যবহারিক জ্ঞানহীন মেয়েদের যেমন দেখেছেন, তেমনি এও দেখেছেন যে, বিজ্ঞানের প্রগতির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষিত মেয়েদের মধ্যে নারী-জীবনের বিবর্তন ও বৈজ্ঞানিক তথ্য জানার জন্য ঔৎসুক্য কী পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মুখ্যত সেদিকে তাকিয়েই তার এই গ্রন্থ। জন্ম থেকে শারীরিক লক্ষণের ভিন্নতা, শৈশবের পর বয়ঃসন্ধিতে পদার্পণ, যৌবনপ্রাপ্তি, বিবাহ, মাতৃত্ব, সন্তানলাভ, শিশুপরিচর্যা ও প্রতিপালন, প্রৌঢ়ত্বে উপনীত হওয়া, ঋতুনিবৃত্তি ও প্রজনন পর্যায়ের পরিসমাপ্তি—নারী-জীবনের এমন প্রতিটি পর্ব ও পর্বান্তর সম্পর্কে যাবতীয় জ্ঞাতব্য তথ্য সুপরিকল্পিত ও সুবিন্যস্তভাবে অধ্যায় পরম্পরায় এই বইতে তুলে ধরেছেন ডা. মিত্র।
স্বনামধন্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও সু-অধ্যাপক ডাক্তার অরুণকুমার মিত্রের ছাত্রজীবন আদ্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ। ১৯৪৬ সালে মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন বহু মেডেল ও বৃত্তি পেয়ে। এরপর বহুকাল যাবৎ স্ত্রীরোগ চিকিৎসা, প্রসূতি-পরিচর্যা, শল্যকর্ম এবং অধ্যাপনা ও গবেষণার কাজে নিয়োজিত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে D.G.O এবং Master of Obstetrics পরীক্ষায় প্রথম স্থান ও স্বর্ণপদক লাভ করেন। পরে ইংল্যান্ড থেকে F R C O G এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গাইনোকলজিক্যাল ক্যানসার রোগ সম্বন্ধে গবেষণা করে পি-এইচ ডি লাভ করেন। কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও পি জি হাসপাতালে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বিভাগে দীর্ঘকাল ধরে অধ্যাপনায় নিযুক্ত থাকার পর বর্তমানে স্বাধীনভাবে চিকিৎসায় আত্মনিয়োগ করেছেন।