বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা মহাভারতের বহুব্যাপ্ত কাহিনী যেমন আকর্ষণীয়, তেমনই আকর্ষক এই মহাকাব্যের বহুবর্ণী চিত্র-বিচিত্র চরিত্রসমূহ। যুধিষ্ঠির-ভীম-অর্জুন, কর্ণ-দুর্যোধন-শকুনি, কিংবা দ্রৌপদী কুন্তী প্রমুখ চরিত্রগুলি তাঁদের স্বকীয়। বৈশিষ্ট্যে প্রবাদপ্রতিম। এই প্রধান চরিত্রগুলাের পাশাপাশি মহাভারতে আরও কিছু উল্লেখযােগ্য চরিত্র আছে, যাঁদের সম্পর্কে মনন ও অনুধাবন করলে মহাভারত পাঠের আনন্দ অপূর্ণ থেকে যায়। এই চরিত্রগুলির মধ্যে যাঁরা বয়সে প্রবীণ তাঁদেরকেই আলােচনার জন্য বেছে নিয়েছেন। লেখক এঁরা হলেন ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপ, ধৃতরাষ্ট্র, বিদুর ও স্বয়ং কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসদেব। মহাভারতের ভীষ্ম বৃদ্ধ বয়সেও যুবক। তিনি নিজের পিতার বিবাহ দেন, পুত্রপ্রতিম বিচিত্রবীর্যের জন্য কন্যা হরণ করেন। দ্রোণাচার্য স্বৰ্গবেশ্যা এক অপ্সরার গর্ভজাত সন্তান। ব্রাহ্মণ হওয়া সত্ত্বেও ক্ষত্রিয়ের অস্ত্রবৃত্তি গ্রহণ করে তিনি হস্তিনাপুরের রাজবাড়িতে আচার্যের পদ অলংকৃত করেছেন। আশৈশব পরজীবী কৃপাচার্য, সারাজীবন দ্রোণাচার্যের উপগ্রহবৃত্তি করে শেষে দ্রৌপদীর পুত্ৰ-হত্যার সহায় হয়ে রইলেন। ভীষ্ম-দ্রোণকৃপ—এই বৃদ্ধত্রয়ীর চাঞ্চল্যকর জীবনচর্যা ছাড়াও এই সংকলনের অন্য প্রধান আকর্ষণ কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস এবং দুই বৈয়াসকি (ব্যাসপুত্র)—ধৃতরাষ্ট্র ও বিদুর। ধৃতরাষ্ট্রের চরিত্রে অসাধারণ জটিলতা। এই জটিলতা এত বর্ণময় ও এত দ্বন্দ্বদীর্ণ যে আধুনিক পাঠকও এই চরিত্রের সামনে এসে সচকিত হয়ে ওঠেন। অন্যদিকে বিদুর শান্ত, সমাহিত রাজবাড়ির ঐশ্বর্য তাঁকে মদর্গবীকরে না। বরং রাজঅন্তঃপুরের অন্যায় তাঁকে প্রতিবাদী করে তােলে। বিদুরের সমগ্র জীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ইতিহাস। সর্বোপরি আছেন কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস স্বয়ং। মায়ের আহ্বানে ভরতবংশের পুত্রবধূদের গর্ভধারন করেন তিনি, তারপর সারাজীবন কৌরব-পাণ্ডবের ইতিহাসের সঙ্গে তাঁর পথচলা। কবি ব্যাসের দৃষ্টিতে ঋষি ব্যাস নিজে কেমন এবং ভীষ্ম-দ্রোণ-কৃপ অথবা ধৃতরাষ্ট্র-বিদুরই বা কেমন—সেই সূক্ষ্ম চরিত্রসূত্রগুলিই লেখক মহাভারতের গভীর থেকে তুলে এনেছেন। তারপর আধুনিক পাঠকের পরিপ্রশ্নের ওপর ভিত্তি করে চিরন্তন মহাভারতীয় চরিত্রের চিত্রায়ণ সম্পন্ন করেছেন।