"মহাভারতের প্রতিনায়ক" বইয়ের ফ্লাপের লেখা: মহাভারতের বিষয় বৈচিত্র্য বিস্ময়কর। লােকচরিত্র বর্ণনে তার তুলনা মেলা ভার। হস্তিনাপুরের সিংহাসনকে কেন্দ্র করে যে-বিরাট যুদ্ধ কুরুক্ষেত্রে হয়েছিল, তার নায়ক এবং প্রতিনায়কেরা প্রত্যেকেই আত্মগুণে সমুজ্জ্বল। এ-গ্রন্থে প্রতিনায়কের অবস্থান বিধৃত। সেইসঙ্গে প্রতিপক্ষে অবস্থিতির বিচিত্র কারণ আলােচিত হয়েছে অসাধারণ যুক্তিনিষ্ঠ বিশ্লেষণে। লেখক মহাভারতীয় উদাহরণে দেখিয়েছেন প্রতিপক্ষতার ধরন সবসময় এক হয় না। বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থৈষণাও প্রতিপক্ষতা তৈরি করে। যেমন হয়েছিল কৃতবর্মার ক্ষেত্রে। এমনকী প্রতিপক্ষতা স্পষ্ট প্রকাশ না পেলেও, আপাত সমর্থনের আড়ালে কখনও ঝলসে ওঠে মনের গােপন টান— যেমন ছিল দুর্যোধনের প্রতি কৃষ্ণজ্যেষ্ঠ বলরামের। এ-গ্রন্থে, অন্যান্য প্রতিপক্ষ নায়কদের সঙ্গে বলরামের জন্যও একই পঙক্তিতে আসন রেখেছেন লেখক। তবে তাঁকে অভিহিত করেছেন উদাসীন বলে। মহাভারতের ঘটনাক্রম সুবিস্তৃত। রাজনৈতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা অন্তহীন। এ গ্রন্থে যে-চরিত্রগুলি প্রধানত আলােচিত হয়েছে, তার মধ্যে মহাভারতের জটিল সূত্রগুলি স্পষ্টতর, কারণ, অধিকারের প্রতি সৎ ও ছলনাহীন দাবির মধ্যে জট-কুটিলতা আয়ােজনের প্রয়ােজন তেমন হয় না— যা হয় অনধিকারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার প্রয়ােজনে। যা করেছিল কৌরবপক্ষ। তবু শেষ পর্যন্ত কুরুক্ষেত্র শুধু ন্যায়-অন্যায়ের যুদ্ধ থাকেনি। এখানেই মহাভারতের চিরকালীন বাস্তবতা।