"শুকসপ্ততি" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: সংস্কৃত সাহিত্যে শুকসপ্ততির ধ্রুপদী গুরুত্ব তেমন হয়তাে নেই, কিন্তু ব্রাহ্মণ চিন্তামণি ভট্টের নামে প্রচারিত এই আখ্যান সংকলনটি দ্বাদশ শতাব্দী থেকে আজ পর্যন্ত সমানভাবে লােকপ্রিয়। আখ্যান-শৈলীর চমৎকারিত্ব শুকসপ্ততিকে অন্য মাত্রায় উত্তীর্ণ করেছে। সংকলিত সত্তরটি গল্পের মূলে আছে এক শুকপাখি। এই পাখিটিই গল্পগুলির কথক। আবার তার ভূমিকা শুধু নিষ্ক্রিয় কথকের নয়। গল্পে বর্ণিত সমাজ-সংসারে সে নিজেই একটি চরিত্র হয়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও সমাজের বৈধপথে থাকবার উপদেশ ছাড়া শুকসপ্ততির সবটাই অবৈধ শৃঙ্গার-লিঙ্গুতার জর্জর উপাখ্যান। কিন্তু গল্পগুলির মূল উদ্দেশ্য কামুকতা দেখানাে নয়। বরং আশ্চর্য হয়ে যেতে হয় এই দেখে, যে-দেশে কৌমার-যৌবন-জরাতেও স্ত্রীলােকের কোনও স্বাতন্ত্র নেই সেখানে এই আখ্যানগুলির সৃষ্টি হল কীভাবে? এ এক অদ্ভুত বাস্তব, এক অদ্ভুত বৈপরীত্য এবং এক অদ্ভুত কৌশল—মদন বিনােদনের দীর্ঘকাল অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রীর সম্ভাব্য চরিত্রহানি রােধ করার জন্য স্থলিত চরিত্রা রমণীদের গল্প শােনানাে হচ্ছে বটে, তবু এই স্খলন পাঠকের মনে দাগ কাটে না। বরং গল্পের চতুরতা ও হাস্যরসাত্মক পরিণতি পাঠককে কৌতুকাবিষ্ট করে। কামনাপতির গল্পগুলিকে তখন আর নিন্দনীয় মনে হয় না, উপরােন্তু আবার পড়ার আগ্রহ জাগে। সুপ্রাচীন এই গল্পগুচ্ছের চিরন্তনত্ব এখানেই।