পরিমল গােস্বামীর স্বচ্ছ চেতনা আর অভিজ্ঞতালব্ধ বােধ থেকে মনে হয়েছিল এবং তা তিনি লিখিতভাবে কবুল করেছিলেন যে তার জীবন-পরিসরে সংঘটিত তিনটি অনন্য বিষয় হল হ্যালির ধূমকেতু দেখা, রবীন্দ্রনাথকে দেখা এবং দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধের শিহর। বুঝেছিলেন রবীন্দ্রসান্নিধ্যের অদ্বিতীয় সংযােগ ভবিষ্যতে অসম্ভব, হ্যালির ধূমকেতুর পুনরাবির্ভাবের সময় তিনি হয়তাে জীবিত থাকবেন না, তবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা নিয়ে তার বাকি জীবন কাটবে। এমন সংক্ষিপ্ত অথচ সূচিতীক্ষ অবলােকন থেকে বােঝা যায় পরিমল গােস্বামীর দর্শনে বেশ বাস্তব স্বাভাবিকতা আছে। তাঁর বহুদিনের ব্যসন ছিল ক্যামেরার চোখে পছন্দসই মানুষজনদের বন্দি করা কিন্তু রঙিন বহুবর্ণিলতাভঙ্গে নয়, সাদাকালাের গভীর অমরতায়। সে সব পােট্রেটে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির চারিত্র্য আর সঠিক অবয়ব এত অনায়াসে তিনি লেন্সে ধরে রেখেছেন যা চিরন্তন ও দুর্লভ। এর গায়ে গায়ে ফুটে আছে একাধিক স্মৃতিময়তার ঘেরে বাঁধা বহু মানুষের স্মৃতির বলয়, যা রেখাচিত্রের মতাে দক্ষ কারুবাসনায় ভাষার আবেশে গাঁথা। এক জীবনে এরকম বাঙালি মনীষী, লেখক, শিল্পী, কর্মী, হাস্যরসিক, বিদ্বান, শিক্ষাব্রতী ও ব্যতিক্রমী নারীর সঙ্গে তাঁর নানা সূত্রে যােগাযােগ হয়েছে। এবং তার বৃত্তান্ত ধরে রেখেছেন সুচারু সম্ভ্রমে যার থেকে দ্রষ্টার উৎসাহ আর সঞ্চয়নের সামর্থ্য স্পষ্ট হয়ে থাকে। তাঁকে যে দলিল-মনস্ক’ বলা হয়েছে তাতে সকলের সায় আছে। লেখনীতে ব্যক্তির চিত্রণ আর ক্যামেরায় ব্যক্তির আলােকচিত্র গ্রহণ যেন একই প্রবণতার দ্বৈত বিচ্ছুরণ, যার মধ্যে অন্তঃশীল হয়ে আছে সময়ের ভাষ্য আর সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা। দুই ক্ষেত্রেই পরিমল গােস্বামীর দৃষ্টিকোণ প্রত্যক্ষ কিন্তু সেই সঙ্গে আশ্চর্য নৈপুণ্যে রয়ে গেছে আত্মপ্রচ্ছন্নতার সহবত, যা তার উন্নত ঘরানাকে চিনিয়ে দেয়।