ফ্ল্যাপে লিখা কথা পলাশির ঘটনাবলী ও যুদ্ধ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে এমন একটি বদ্ধমূল ধারণা প্রচলিত আছে যে, সিরাজদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করবার জন্য মীরজাফর, জগৎশেঠ প্রমুখ তখনকার কয়েকজন বণিক-ব্যাংকার-অভিজাত মানুষ চক্রান্ত সাজিয়েছিলেন। পেছন থেকে তাঁদের সাহায্য করেছিল ইংরেজরা। পলাশির পেছনে ইংরেজদের কোনও ‘পূর্বপরিকল্পনা’ ছিল না, তাদের বাংলাবিজয় নেহাতই ‘আকস্মি ‘ ঘটনা। এমনকী, অনেক ঐতিহাসিক এও মনে করেন, বাংলার ‘আভ্যন্তরীণ সংকট’ ই ইংরেজদের বাংলায় ডেকে আনে। এই গ্রন্থ কিন্তু ঠিক এর উল্টো কথাই বলেছে। পলাশির ষড়যন্ত্র ও প্রাক্-পলাশি ঘটনাবলীর বিশদ ও সূক্ষ্ণ বিশ্লেষণ করে এবং ডাচ ও ইংরেজ কোম্পানির নথিপত্র, কোম্পানির কর্মচারীদের লেখা থেকে অসংখ্য তথ্য সংগ্রহ করে লেখক সন্দেহাতীতভাবে দেখিয়েছেন যে, পলাশি চক্রান্তের মূল নায়ক ইংরেজরাই। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও মদত ছাড়া ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধ কোনওভাবেই সম্ভব হত না। তারাই একদিকে ভারতীয়দের নানা প্রভোলণ ও প্রচ্ছন্ন ভয় দেখিয়ে, অন্যদিকে কাকুতি-মিনতি করে অন্যদের নিজস্ব চতুর ‘পরিকল্পনা’য় সামিল করিয়েছিল। সেই সময় ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য নিদারুণ সংকটে পড়ে যাওয়ায়, কোম্পানির কর্মচারীদের কাছে ছলে-বলে কৌশলে বঙ্গবিজয় ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না। পলাশির যুদ্ধ তারই পরিণতি। এই গ্রন্থের লেখক পলাশি নিয়ে বহু ধারণাকে আসার প্রমাণিত করেছেন, প্রতিষ্ঠা করেছেন আবিষ্কৃত নতুন তথ্য ও সত্যের।
সূচিপত্র * ভূমিকা * প্রাক্-পলাশি বাংলার রূপরেখা * সিরাজ চরিত্র কথা * ইউরোপীয় কোম্পানি ও এশীয় বণিক সম্প্রদায় * সিরাজদ্দৌল্লা ও ইংরেজ কোম্পানির সংঘাত * পলাশি বিপ্লবের অনিবার্যতা * ষড়যন্ত্রের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ * চক্রান্তের মূল নায়করা * পলাশি অভিমুখে : ইংরেজ পরিকল্পনা * পলাশির পরিণাম : সুদূরপ্রসারী প্রভাব * উপসংহার * নির্বাচিত গ্রন্থপঞ্জি * নির্ঘণ্ট
Sushil Chaudhury জন্ম ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৭ । প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি. এ। এম.এ. ইতিহাসে প্র্রথম শ্রেণীতে প্রথম, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। কমনওয়েলথ স্কলার হয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি. এইচ. ডি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে অধ্যাপনা। ওই বিভাগেরই ‘ইউনিভার্সিটি চেয়ার’ পদে আসীন ছিলেন ১৯৮৭ থেকে ২০০২। পাশাপাশি ইতিহাস বিভাগেও অধ্যাপনা। ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা, ফ্রান্স, হল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে অধ্যাপনা করেছেন, বক্তৃতা ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন। প্যারিসে দুটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজক। ইন্টারন্যাশনাল ইকনমিক হিস্ট্রি কংগ্রেসের মিলান, মাদ্রিদ, বুয়েনাস আইরিস ও হেলসিঙ্কির অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। বর্তমানে রয়্যাল হিস্টরিক্যাল সোসাইটি, ইংল্যান্ড-এর ফেলো এবং ভারতের ইউ. জি. –র এমেরিটাস ফেলো। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: ট্রেড অ্যান্ড কমার্শিয়াল অর্গানাইজেশন ইন বেঙ্গল; মার্চেন্টস, কম্পানিজ অ্যান্ড ট্রেড; দি প্রিলিউড টু এম্পায়ার: প্লাসি রেভেলিউশন অফ সেভেনটিন ফিফটি সেভেন; পলাশির অজানা কাহিনী, ইত্যাদি।