ভূমিকা জ্ঞান তাপস ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমাণ করেছেন নাথ-সাহিত্যের আদিনাথ ‘মনীনাথ’ নামান্তরে মৎস্যেন্দ্রনাথ’ ৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে নেপাল রাজদরবারে আমন্ত্রিত ছিলেন। এ থেকে প্রমাণিত হয়, মীননাথ এ সময়ের আগে বাংলা অঞ্চলে সাধক-কবি হসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। মীননাথের কাব্য চর্চার ভাষা বাংলা হলে, বাংলা ভাষা বিবর্তন ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে অনুমান কতটা সংগতিপূর্ণ আর একবার ভেবে দেখার বিষয়। আমাদের মনে হয়েছে, ৫৬০ খ্রিস্টাব্দের আরও আগে বাংলা ভাষা ‘নববধূর ঘোমটা’ খুলেছে। জ্ঞান তাপস ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ অবশ্য বলেছেন -‘জানি না কতদিন বঙ্গবাণী জন্মিয়া ঘরের কোণে লাজুক বধূটির মত নিরিবিলি বাস করিয়াছিল।’ এই না-জানার সংশয় এবং সময় নির্ধারণের পরস্পর বিরোধী মত ; সাথে যোগ হয়েছে আর এক জ্ঞান তাপস ড. সুকুমার সেন-এর ‘ভাষা লইয়া দেশ’ । যে দেশের ভাষা বাঙ্গাল তাহাই বাঙ্গালা দেশ।’ ঘোষণা করেই বিরোধী মত প্রচার করলেন , বললেন-সংস্কৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষা উৎপত্তি। এ যদি হয়, তাহলে ঐতরের আরণ্যকে ‘বঙ্গ’ এলো কোথা থেকে? ড. সুকুমার সেনের প্রথম মত গ্রহণ করলে তাঁর দ্বিতীয় মত গ্রহণ করা যায় না। আমার এ লেখার প্রেরণা এখানেই । বিজ্ঞ পণ্ডিতদের মত; বিরোধী মতের আলোচনা আমাকে বারবার বাংলা ভাষাও উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে ভাবিয়েছে এবং সে ভাবনা-চিন্তাকে ভাষায় রূপদেয়ার চেষ্টা করেছি। সংগত কারণেই প্রবন্ধ গুলোতে পণ্ডিতদের মতামতের আলোচনা ও বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি, আমার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা মনে রেখে। যে কারণে লেখাটি সম্পূর্ণ মৌলিকত্যের দাবী করে না, সে আশাও এখানে বৃথা। নতুন কিছু পাওয়া যেতে পারে নতুন গবেষণা কর্মে। সে সাধ্য-জ্ঞান আমার নাই।
এ গ্রন্থের মূল বিষয় যেহেতু বাংলা ভাষা নিয়ে আলোচনা, সেহেতু বাংলাদেশও এর সাথে যুক্ত। এ কারণ বিবেচনা করে গ্রন্থ সাজানোর চেষ্টা করেছি। প্রথমে বাংলা ও বাঙ্গালী পরিচিতি, দ্বিতীয়ত : বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকশিত পথের উৎস নিয়ে সামান্য আলোচনা তুলে ধরেছি। প্রবন্ধ গুলোতে পাঠকের ঘাড়ে উদ্ধৃতির বোঝা চাপিয়েছি অনেক। এ ছাড়া কিছু করারও ছিল না। উদ্ধৃতি না হলে মতের সমর্থন বা অসমর্থন পাব কি করে? বাঙ্গালীর বোঝা বাঙ্গালী বহন করবে, সে বোঝা’র ঝুলিতে তার ঐতিহ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে, এ আশা করি। বাঙ্গালীর বাংলা সমৃদ্ধ হোক, বাঙ্গালীর জয় হোক চিরকাল। বিনীত- গ্রন্থকার