"আবু ইব্রাহীমের মৃত্যু" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: কথাসাহিত্যিক শহীদুল জহিরের মৃত্যুর পর গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলাে উপন্যাস আবু ইব্রাহীমের মৃত্যু। এই আবু ইব্রাহীম ছিল একজন অসুখী লােক। অথচ উদ্ভাসিত হাসি বা পত্নী-প্রণয়ের বাইরে ছিল না সে। কিন্তু তার ছিলাে ব্যর্থ প্রণয়ের বিষন্নতা এবং যৌবনে লালিত রাজনৈতিক আদর্শ অর্জনের পথ থেকে সরে আসার গ্লানিবােধ। হেলেন নামের একটি মেয়ে ছিলাে তার সহপাঠী, কয়েকদিন হেলেন ক্লাসে না আসায় তাকে দেখার জন্য। আবু ইব্রাহীমের মন বড় উতলা হয়ে যেত তারপর হেলেন প্রত্যাবর্তনের পর তাকে দেখে তার সঙ্গে কথা বলে আবু ইব্রাহীমের অস্তিত্ব শেষ হয়ে যায়; তার অন্তর বেদনায় ভরে থাকে । হেলেন তার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করেনি এবং সে ব্যর্থ প্রেমের কাঙালপনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়। চত্বরে ছ’বছর ঘুরে বেড়িয়েছিল। আর তার বহুদিন পর বিবাহিত জীবনে স্ত্রী-পুত্র-কন্যার বেষ্টনের মধ্যে আবু। ইব্রাহীমের মনে হয় যে, হেলেনকে ছাড়া সে মরে যায়নি। আবার তার এও মনে হয়, হেলেনের সে প্রেমিক ছিল না, ছিল পূজারি এবং হেলেন দেবীদের মতােই পূজারিকে অবহেলা করতে শিখেছিল। একদিন নিজের কন্যা বিন্দুকে নিয়ে আবু ইব্রাহীম রমনা পার্ক হয়ে সােহরাওয়ার্দি উদ্যানের এক চাঁপাফুল গাছের তলায় বসে অনুভব করে মেয়েটির সঙ্গে গল্প করতে। তার ভালাে লাগে যেমন, অতীতে হেলেনের সঙ্গে কথা বলতে তার ভালাে লাগত। হেলেন তার প্রেমিকা ছিল, মুহুর্তের মধ্যে তার মনে হয় বিন্দুও তার প্রেমিকা। ভালােবাসা যে একটি ব্যাপার তা চাপাফুল গাছ তলায়। বসে নিজের কন্যার সঙ্গে কথা বলার সময় সে বুঝতে পারে। তখন বিন্দুর মাথায় কর স্থাপন করে এবং নিজে আশ্বস্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু অতীত প্রেমিকার আগমন, চলমান সংসার ও সম্মুখ স্বপ্নের মধ্যে আকস্মিক মৃত্যু আসে, আর তখনই সত্য হয়ে ওঠে এই উপন্যাসের অমর সত্যদর্শন-জীবন, আনন্দ এবং বেদনা সর্বদাই একটি খেলামাত্র।
Shahidul Zahir (১৯৫৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর) পুরান ঢাকার নারিন্দার ৩৬ ভূতের গলিতে (ভজ হরি সাহা স্ট্রিট) জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তার নাম ছিল মোহাম্মদ শহীদুল হক। তার পিতা এ কে নুরুল হক ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা ও মা ছিলেন গৃহিনী। তার পৈতৃক বাড়ি ছিল সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার হাশিল গ্রামে। তার দাদা জহিরউদ্দিন (সম্ভবত তিনি তার জহির নামটি তার দাদার কাছ থেকে নিয়েছিলেন) ছিলেন স্কুলশিক্ষক ও তার দাদী জিন্নাতুন নেসা। তার পিতার শৈশবেই তারা মারা যান। তার নানা ছিলেন সিরাজগঞ্জের আমলাপাড়ার আজিমুদ্দিন আহমেদ ও নানি হামিদা বেগম, যাদের কাছে তিনি প্রায়ই বেড়াতে যেতেন। এই জায়গাগুলি এবং সাতক্ষীরার ফুলবাড়ীয়া যেখানে তিনি প্রায়ই বেড়াতেন, তার মনে গভীর ছাপ রেখে যায় এবং পরবর্তীতে তার সাহিত্যকর্মে এই জায়গাগুলির উল্লেখ পাওয়া যায়। শহীদুল জহির তার স্কুলজীবন শুরু করেছিলেন ঢাকার ৩৬ রাঙ্কিন স্ট্রিটের সিলভারডেল কেজি স্কুলে, পরবর্তীতে ঢাকা, ফুলবাড়ীয়া, ময়মনসিংহ, সাতকানিয়া ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুলে পড়েছেন। সাতকানিয়া মডেল হাই স্কুল থেকে এস.এস.সি পাশ করেন ও ঢাকা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ওয়াশিংটন ডিসির আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ও বারমিংহাম ইউনিভার্সিটিতেও পড়ালেখা করেন। তিনি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে সহকারী সচিব পদে যোগ দেন। ২০০৮ এ তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে কাজ করে গেছেন। শহীদুল জহির ছিলেন চিরকুমার এবং প্রায়ই তাকে এব্যাপারে প্রশ্ন শুনতে হত। কথা ম্যাগাজিনের সম্পাদক কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন যে তিনি এটি ব্যাখ্যা করতে অক্ষম , "আমি এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারব না, এটা এমনিতেই ঘটে গেছে" তার চার ভাই ও চার বোন ছিল। তার বাবা ১৯৯০ এ মারা যান ও তার মা ঢাকায় ভাইবোনদের সাথে থাকেন। তিনি কম কথা বলতেন এবং অন্তর্মুখী ছিলেন। তার সাথে বন্ধুত্ব করা কঠিন ছিল তবে তিনি অনেক বন্ধুসুলভ ছিলেন। তিনি ২০০৮ সালের ২৩ মার্চ ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হসপিটালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।