"হিউয়েন সাঙ ভ্রমণ কাহিনী"বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: প্রাচীন কাল থেকে অদ্যাবধি ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বাংলায় যে সব ভ্রমণকারী এসেছেন তার মধ্যে চৈনিক ভ্রমণকরী হিউয়েন সাঙ অন্যতম। সম্ভবত ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের কোন এক সময়ে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করেন। হিউয়েন সাঙ ছিলেন চীন দেশীয় এক সম্ভ্রান্ত বনেদী পরিবারের সন্তান। সন্তানের অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা লক্ষ্য করে তাঁর পিতা খুব অল্প বয়সেই তারই এক বড়াে ভাইয়ের হেফাজতে একটা মঠে প্রেরণ করেন। সেই মঠেই তিনি আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে শিক্ষা গ্রহণ করতেন। পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে হিউয়েন সাঙ তার আশপাশের মঠগুলাের জীবন যাত্রা ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করতেন। পরবর্তীতে এই মঠের জীবন যাত্রার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাবােধ জাগরিত হয় এবং তিনি শ্ৰমণ হবেন বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কুড়ি বৎসর বয়সে শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি শ্রমণ হলেন। ততােদিন তিনি একটি বিষয় জানতে পেরেছেন তা হলাে তাঁর দেশের মানুষের বৌদ্ধ ধর্ম বিচার জ্ঞান খুবই সীমিত। আর তিনি নিজেও বৌদ্ধ ধর্মের বহু নিয়ম কানুন অবগত নন। তিনি ভাবলেন কোনভাবে যদি ভারত বর্ষে পৌছানাে যায় তাহলে বৌদ্ধ ধর্মের মূল গ্রন্থগুলাের কাছাকাছি আসতে পারবেন এবং তাঁর নিজের মনের দুয়ারও খুলে যাবে, সংশয়ও দূর হবে। | বয়স তখন তার সবে উনত্রিশ, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন ভারত বর্ষ ভ্রমণের। তার ইচ্ছা ভারতে গিয়ে বৌদ্ধদের বড়াে তীর্থস্থানগুলাে দেখবেন এবং বড়াে সাধু সন্তদের কাছ থেকে ধর্ম বিষয়ে দীক্ষা গ্রহণ করবেন। চীনদেশের সম্রাট কিন্তু তাকে ভারতবর্ষে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করলেন । অতএব বাধ্য হয়েই ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দের কোন এক সময়ে তিনি গােপনে দেশ ত্যাগ করলেন। সেকালে যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল খুবই খারাপ। চীন থেকে ১৫০০০ মাইল দীর্ঘ পথ কতাে পাহাড় পর্বত আর মরুভূমি বিপদসংকুল অরণ্য এসব অতিক্রম করা সহজসাধ্য কর্ম ছিল না সেকালে। | হিউয়েন সাঙ সম্ভবত খাইবার গিরিপথের ভেতর দিয়ে ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছিলেন। সিন্ধু নদ পার হয়ে কাশ্মীর, সেখান থেকে মথুরা, কনৌজ, গঙ্গানদী পাড়ি, প্রয়াগ, বারানসী, এলাহাবাদ, শ্রাবন্তী, বৈশালা, কপিলাবস্তু, সারনাথ, গয়া, পাটলিপুত্র, উজ্জয়িনী, কুশানগর, রাজগৃহ মােট কথা বুদ্ধের জীবনের সাথে