ভূমিকা পৃথিবীতে নানা রঙের, নানা ঢঙের মানুষের বসবাস। বেশিরভাগ মানুষ সুখী হতেই মগ্ন থাকে আজীবন। অথচ কার্যক্ষেত্রে গিয়ে দেখা যায় বেশিরভাগ মানুষই অসুখী জীবনযাপন করে থাকে। কেন? কারণ, আমরা বেশিরভাগ মানুষ সুখী হওয়ার মূলমন্ত্র জানি না। এ কথা সত্য যে, সুখ আংশিকভাবে নির্ভর করে বাইরের ঘটনা প্রবাহ আর নিজের উপর। হ্যাঁ, ‘নতুন জীবনের সন্ধানে’ গ্রন্থে মনীষী বারট্রান্ড রাসেল সুখী-সু্ন্দর জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোকপাত করেছেন। বোঝাতে চেয়েছেন আমাদের অবস্থান কোথায় আর সুখের অবস্থান কোথায়। আলোচনা করতে গিয়ে তিনি নিজেই বলেছেন, “সুখ কোনোমতেই পাকা ফলের মতো ভাগ্যের পরিস্থিতিতে মুখে এসে পড়ে না। এই কারণেই এই বইয়ের নামকরণ করেছি ‘নতুন জীবনের সন্ধানে’।কারণ যে দুনিয়ায় এড়িয়ে যাওয়া বা না যাওয়ার মতো দুর্ভাগ্য, রোগ, মানসিক দৃষ্টকোণ, লড়াই আর দারিদ্র ইত্যাদি রয়েছে, সেখানে স্ত্রী বা পুরুষকে সুখী হতে গেলে প্রত্যেককেই সুখের বিভিন্ন উপায় গ্রহণ না করলে চলে না।” বারট্যান্ড রাসেলের এমন সরল উক্তিতে প্রকাশ পায় যে, সুখলাভ করার জন্য খুব কষ্ট করতে হয় না কিংবা সম্পদশালী হতে হয় না, দরকার সচেতনতার। আশা করি গ্রন্থটি হতাশায় নিমজ্জিত ও জীবন সম্বন্ধে আগ্রহীদের নতুন নতুন ভাবনা পথ খুলতে সহায়তা করব। -অনুবাদক-
সূচিপত্র মানুষ অসুখী হয় কেন? বায়রনীয় অসুখিত প্রতিযোগিতা একঘেয়েমি আর উত্তেজনা ক্লান্তি ঈর্ষা পাপের অনুভূতি নির্যাতনের বাতিক জনমতের ভীতি তবু কি সুখলাভ সম্ভব? উৎসাহ স্নেহ পরিবার কাজ নৈর্ব্যক্তিক আগ্রহ প্রচেষ্টা ও হালছাড়া সুখী মানুষ
(১৮ মে ১৮৭২ – ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০) ছিলেন একজন ব্রিটিশ দার্শনিক, যুক্তিবিদ, গণিতবিদ, ইতিহাসবেত্তা, সমাজকর্মী, অহিংসাবাদী, এবং সমাজ সমালোচক.যদিও তিনি ইংল্যান্ডেই জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন, তার জন্ম হয়েছিল ওয়েলস এ, এবং সেখানেই তিনি ৯৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। রাসেল ১৯০০ সালের শুরুতে ব্রিটিশদের আদর্শবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব প্রদান করেন। তাকে বিশ্লেষণী দর্শনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিবেচনা করা হয়, এর অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতারা ছিলেন তার শিষ্য ভিটগেনস্টেইন এবং পূর্বসূরি ফ্রেগে এবং তাকে ২০ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম যুক্তিবিদদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রাসেল এবং হোয়াইটহেড একত্রে প্রিন্কিপিয়া ম্যাথমেটিকা নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যাতে তারা গণিতকে যুক্তির ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। তার দার্শনিক নিবন্ধ "অন ডিনোটিং" দর্শনশাস্ত্রে মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়। দুটো গ্রন্থই যুক্তি, গণিত, সেট তত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব এবং দর্শনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত যুদ্ধবিরোধী ব্যক্তিত্ব এবং জাতিসমূহের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যে বিশ্বাস করতেন। তিনি ছিলেন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী। রাসেল তার অহিংস মতবাদ প্রচারের জন্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জেলবন্দী হন, তিনি হিটলারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান, সোভিয়েত টোটালিটারিয়ানিজম এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার অংশগ্রহণের সমালোচনা করেন এবং পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে ছিলেন সর্বদা সোচ্চার। রাসেল ১৯৫০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন, যা ছিল "তার বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ রচনার স্বীকৃতিস্বরূপ যেখানে তিনি মানবতার আদর্শ ও চিন্তার মুক্তিকে ওপরে তুলে ধরেছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধবিরোধীর ভূমিকা নেন, ফলস্বরূপ তাঁকে ছ'মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। সেই সঙ্গে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের অধ্যাপক পদ থেকে বরখাস্ত হন। ১৯৫০ সালে পারমানবিক নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে আন্দোলন সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এই কারণে ১৯৬১ সালে তাঁকে আবার কারাদনণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ১৯৭০ সালে বারট্রান্ড রাসেল মৃত্যুবরণ করেন।