কাহিনী সংক্ষেপ স্বাধীনতা শুধু যে একটি অনুভবের নাম নয় বরং তার পেছনে থাকে রক্ত, নিপিড়ন আর প্রতারণার তীব্র দহন সরাসরি অংশ না-নেয়া মানুষের পক্ষে সে সত্যকে বোঝা কঠিন। আরও কঠিন তাদের জন্য, যাদের অন্তরকে স্বাধীনতার মূলধ্বনি স্পর্শ করে না। যাদের কাছে স্বাধীনতা সকল সময় আনুষ্ঠানিকতার মতো রঙ্গময় বিষয়। গমের দানা কেনিয়ার স্বাধীনতা লাভের এই সকরুণ প্রেক্ষাপটেরই অনন্য দলিল। উপনিবেশবাদের কুফলে বিভক্ত জাতি, সাম্প্রদায়িকতা ও স্বার্থের সংঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া বিশ্বাস ও দ্বিধার বর্ণনায় উজ্জ্বল এই উপন্যাস নগুগীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে স্বীকৃত। গমের দানা’র প্রধান চরিত্র পাঁচটি : কিহিকা, কারাঞ্জা, মুগো, গিকোনিউ ও মুম্বি। মাউ-মাউ বিপ্লবের শেষ পর্বে, স্বাধীনতার ক্রান্তিলগ্নে, এই পাঁচ চরিত্রের বিচিত্র প্রকাশ ও বিকাশই বইটিকে মহিমাত্নিক করেছে। কিহিকা মুক্তি বাহিনীতে যোগ দিয়ে হারিয়ে যায় গেরিলা জঙ্গলে; গিকোর্নিও বিপ্লবীদের সমর্থনে বন্দীত্ব বরণ করে; তার স্ত্রী মুম্বি বাড়ি এবং সংসার বাঁচানোর জন্য প্রেমকে কুরবানী দিতে বাধ্য হয়; কারাঞ্জা বেছে নেয় বৃটিশদের আনুগত্য আর অনাথ-মুগো বন্ধুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে অন্তিমে যা পাঠকের চোখকে অশ্রুসিক্ত করে।
মন্তব্য আ গ্রেন অব হুইট কেনিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অসাধারণ চিত্র। শ্বেতাঙ্গদের চলে যাওয়া আর কালোদের উঠে দাঁড়াবার প্রেক্ষাপট যেন ইতিহাসের পাহাড়ে সত্যের উঠে দাঁড়ানো। নগুগীর লেখা শুধু চমৎকারই নয়, মেধাবী এবং স্বাদেশিকও বটে। বলা চলে, এই-ই আফ্রিকার পুনরুত্থান। ওয়েস্টার্ন মেইল। নগুগীর লেখাই প্রমাণ করে ইতিহাস এক জীবন্ত স্রোত। চলমান, উষ্ণ, অবিরাম...। তিনি লেখেন গভীরতর বোধে আনন্দ বিছিয়ে প্রতিবার নিজেকেই অতিক্রম করার দুঃসাধ্য সাফল্যে।
লেখক পরিচিতি : নগগুগী ওয়া থিয়োংগো’র (প্রচলিত উচ্চারণে নগুগী) জন্ম ৫ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে কেনিয়ার লিমরুতে। কিকিইয়ো স্কুল, ম্যাকারেরে বিশ্ববিদ্যালয় (উনাঙ্গ) এবং যুক্তরাজ্যের লিড্সে তার পড়াশোনা। কর্মজীবন কেনিয়া, উগাণ্ডা, ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে। বৈচিত্র্যময় লেখা, বিশেষত নৃতাত্ত্বিক পটভূমিতে মানুষের স্বাধীকারের প্রশ্নটি বারবার উচ্চারিত হয়েছে তার দ্য রিভার বিটুইন, পেটাল্স অব ব্লাড কিংবা ডেভিল অন দ্য ক্রস-এ। ‘গমের দানা’ লেখা হয়েছে কারাগারে বসে বিনাবিচারে যেখানে তাকে কাটাতে হয়েছে পূর্ব প্রকাশিত বই আই উইল মেরি হোয়েন আই ওয়ান্ট-এর জন্য। এটি তার মাতৃভাষায় লেখা প্রথম বই (১৯৬৭)। ভাষা, দেশ এবং নিগ্রোদের জন্য নগুগীর ‘সংগ্রাম’ আজ ইতিহাসের অংশ। মিশনারীদের হাতে ধর্মান্তরিত এ লেখক আবার ফিরে গেছেন আদি ধর্মে; নিজ ভাষায়। এবং এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন আফ্রিকার কণ্ঠস্বর। গত কয়েক বছর ধরে তার নাম নোবেল পুরস্কারের জন্যে যে কারণে বিবেচিত হয়ে আসছে, আ গ্রেন অব হুইটসহ আরো কয়েকটি অসাধারণ উপন্যাসই তার জন্য দায়ি।
অনুবাদক পরিচিতি : বুলবুল সরওয়ার কুরবান সাইদের কালজয়ী ক্ল্যাসিক আলী ও নিনো দিয়ে অনুবাদ শুরু করেন। মৌলিক ও অনুবাদসহ তার ঊনিশটি গদ্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কবিতায়ও তাঁর সমান দক্ষতা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে স্নাতক বুলবুল সরওয়ার উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন নিপসম ও কায়রো ডেমোগ্রাফি সেন্টার থেকে। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর নানা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতায় নিয়োজিত। জন্ম ২৭ নভেম্বর ১৯৬২ সালে গোপালগঞ্জ জেলায়।