কাহিনী সংক্ষেপ উপন্যাস পড়ার সময় আমাদের ভিতর ঠিক কী হয়? আর কীভাবেই-বা উপন্যাস তার অনন্য ফল সৃষ্টি করে, যে ফল ছবি থেকে, চলচ্চিত্র থেকে বা কবিতা থেকে এত পৃথক? এই চিন্তামূলক, গভীরভাবে ব্যক্তিগত বইটিতে, ওরহান পামুক আমাদের লেখক ও পাঠকদের বিশ্বে নিয়ে যান, প্রকাশ করেন তাঁদের অন্তরঙ্গ যোগাযোগ। পামুক ‘অকপট’ কবিদের যাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে, প্রগাঢ়ভাবে, অসচেতনভাবে লিখে থাকেনও ‘ভাব প্রধান’ কবিদের : যাঁরা চিন্তাপ্রধান, আবেগাশ্রয়ী, প্রশ্নমুখর ও লেখা শব্দের কৃৎকৌশলের প্রতি জাগ্রত মধ্যে পার্থক্যের বিষয়ে বিচরণ করেন। যৌবনে পড়া প্রিয় উপন্যাসগুলির দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে, টলস্টয়, দস্তয়েভস্কি, স্তাঁদাল, ফ্লবেয়ার, মান ও নাইপলের লেখা খুঁজে দেখে পামুক অকপট ও চিন্তাপ্রধানের ভিতর আন্দোলিত হতে থাকেন, অন্বেষণ করেন কাক্সিক্ষত ভারসাম্য, ঔপন্যাসিকের নির্মাণ-কৌশলের কেন্দ্রে যার অবস্থান, তিনি উপন্যাসের দৃশ্যগত ও ইন্দ্রিয়গত শক্তি নিয়ে মগ্ন থাকেন। সে শক্তির প্রাণবন্ত নিসর্গচিত্র নির্মাণের ক্ষমতা এই মুহূর্তের স্থান-কালকে প্রায় মুছে দেয়। এই অনুসন্ধানের পথে, পামুক, চরিত্র, ছক, সময় ইত্যাদির উপাদানকে বিবেচনায় আনেন, যে উপাদান গল্পবিশ্বের ‘মিষ্টি বিভ্রমকে’ রচনা করে। উপন্যাসের গভীরে নিমজ্জিত হওয়ার আনন্দের সাথে পরিচিত ব্যক্তিমাত্রেই আধুনিক উপন্যাস শিল্পের একজন অগ্রণী শিক্ষকের এই বইটি উপভোগ করবেন, শিক্ষা নেবেন গ্রন্থকারের উপলব্ধ সত্য থেকে।
মন্তব্য চল্লিশ বছর ধরে আমি উপন্যাস পড়ছি। আমি জানি উপন্যাসের ক্ষেত্রে গ্রহণ করার মতো অনেক ভঙ্গি আছে, অনেক পথ আছে যার মাধ্যমে আমরা আমাদের আত্মা ও মনকে উপন্যাসের উদ্দেশ্যে নিবেদন করতে পারি। উপন্যাসকে নিতে পারি হালকা বা গভীরভাবে। একইরকমভাবে অভিজ্ঞতা থেকে আমি শিখেছি উপন্যাস পড়ার অনেক রাস্তা আছে। আমরা কখনো যুক্তি দিয়ে পাঠ করে থাকি, কখনো-বা পড়ি চোখ দিয়ে, কখনো পড়ি কল্পনা দিয়ে, কখনো মনের অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটু অংশ দিয়ে, কখনো পড়ি ইচ্ছেমতো, কখনো পড়ি পঠিত বইয়ের ইচ্ছের ওপর নির্ভর করে, আর কখনো কখনো আমরা আমাদের সত্তার সমস্ত তন্তু দিয়ে পাঠ করি।
লেখক পরিচিতি ফেরিট ওরহান পামুক-এর জন্ম ৭ জুন ১৯৫২ সালে ইস্তান্বুলের এক সম্পন্ন পরিবারে। পরিবারের ঐতিহ্য অনুসরণ করে ইঞ্জিনিয়ারিং আর্কিটেকচার এবং সাংবাদিকতায় উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। কিন্তু, এগুলোর কোনোটিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন নি তিনি। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর তার প্রথম উপন্যাস, ‘সেভডেট বে অ্যান্ড হিজ্ সন্স’ প্রকাশিত হয়। তারপর থেকে একে একে প্রকাশিত হয় ‘দ্য সাইলেন্স হাউজ,’ ‘দ্য হুয়াইট ক্যাসল,’ ‘দ্য ব্ল্যাক বুক,’ ‘দ্য নিউ লাইফ,’ এবং ১৯৯৮ সালে তাঁর শ্রেষ্ঠ কির্তী ‘আমার নাম লাল’। ২৪টি ভাষায় অনূদিত এই উপন্যাসটি বিশ্বে শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলোর অন্যতম। ‘তুষার,’ ‘নিষ্পাপের প্রদর্শশালা’ এবং অন্যান্য বিখ্যাত উপন্যাসের রচয়িতা ওরহান পামুকের আরো একটি বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইস্তান্বুল : একটি শহরের স্মৃতিচারণ’। ২০০৬ সালে তিনি নোবেল সাহিত্য পুরস্কারে সম্মানিত হন।
অনুবাদক পরিচিতি সঞ্জীবন সরকার ১৯৬৪ সালে পুরনো কলকাতার ঐতিহ্যমেদুর বাগবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে জীবিকা হিসেবে বেছে নেন সরকারি চাকুরে জীবন। মিতবাক্ প্রাজ্ঞদর্শন এবং নিরভিমান সঞ্জীবন সরকার সংবেদপর্বে সাহিত্যের একজন পিপাসু পাঠক হিসাবেই বিদ্বজ্জন সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। সাহিত্য সাধনা শুরু করেন অনুবাদের মধ্য দিয়েই। ১৯৯১ সালে নবীন কবিদের একটি বাংলা কবিতার সংকলন : ঘবি New Voices In Bengali Poetry নামে তিনি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেন।
Title
অকপট ও ভাবপ্রধান ঔপন্যাসিক : চার্লস এলিয়ট নর্টন ভাষণমালা ২০০৬ (পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের বই)
সঞ্জীবন সরকার ১৯৬৪ সালে পুরনাে কলকাতার ঐতিহ্যমেদুর বাগবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে জীবিকা হিসেবে বেছে নেন সরকারি চাকরি। মিতবাক প্রাজ্ঞদর্শন এবং নিরভিমান সঞ্জীবন সরকার সংবেদপর্বে সাহিত্যের একজন পিপাসু পাঠক হিসাবেই বিদ্বজ্জন সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। সাহিত্য সাধনার শুরু নবীন কবিদের একটি বাংলা কবিতার সংকলন : New Voices in Bengali Poetry ইংরেজি ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে।