খীয়ার তখন ভয়ানক রুক্ষ। সূর্যের ঝাঝালো তেজ সমস্ত জল শোষণ করে একেবারে ইস্পাত করে দিয়েছে। রাঢ়বঙ্গের লালচে রঙের এই জমাট খীয়ারে দাঁত বসাতে চাইলে খন্তা তো খন্তা, গাঁইতি-শাবলও বেঁকেচুরে যাবে। জোরেশোরে কোদালের বিশ-বাইশ কোপ মারলেও একটা চাঙ্গর তোলা যাবে না। এমন শুষ্ক- বর্বর-রুক্ষতায় ধুলার বাড়াবাড়ি চক্ষে ভাসার কথা। ধুলায় ধুলাকার হয়ে সব অস্পষ্ট-ঝাপসা থাকার কথা। কিন্তু ইখানে কিনা অন্যরূপ দৃশ্য! ধুলায় ধুলাকার হওয়া দূরে থাক, দেখে মনে হবে জমিনের চোয়াল চেপে ধরা ধুলাবালি কেউ যেন নিপুণ যত্নে লেপে-পুছে দিয়ে গেছে। লেপে-পুছে একেবারে সাফ-সুতরো করে দিয়ে গেছে। হিমের মরশুমে খীয়ারের এমন কাঠ-কাঠ চেহারা দেখে বুঝা অসাধ্য বর্ষাকালে তার ভিন্ন ধাত। কী যে মোলায়েম, কোমল, নরম, তুলতুলে! যেন বা উর্বরা নারীর যোনিকন্দর। বীজ ফেলা মাত্রই ধাই ধাই করে বেড়ে উঠবে শতেক জীবন। বেশুমার আউশের ধানি সবুজে ছেয়ে যাবে বিস্তীর্ণ ভূমি। লালচে খীয়ারের এমন ঢলঢলানো প্রকৃতি আশ্চয্যি গোলকধাঁধা বটে! মধুপুর কর্দমে কোনোভাবে পা দিলেই বিঘতখানি তলিয়ে যাওয়া। তারপর হাঁটু কি উরু অব্দিই হাপিস হয়ে যাবে। চারপাশে তাকালে যেন আর কিছু নাই।