ভূমিকা বইটির প্রথম প্রকাশ ১৯২৫ ইংরেজি সালে। অপেক্ষাবাদের মৌল নীতির কোনো পরিবর্তন তারপর হয়নি। কিন্তু তত্ত্ব এবং প্রয়োগের বিস্তার বেড়েছে অনেক। সেইজন্য দ্বিতীয় এবং তার পরের সংস্করণগুলিতে কিছু পরিমার্জনা করতে হয়েছে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সংস্করণের বাট্রান্ড রাসেলের অনুমোদন নিয়ে এই পরিমার্জনা আমি করেছি। এই চতুর্থ সংস্করণের পরিমার্জনার দায়িত্ব সম্পূর্ণ আমার। বর্তমান জ্ঞান এবং মতবাদের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষার জন্য আমি এবারও কয়েকটি বাক্যের পরিবর্তন করেছি। এবং যেখানে আমার মনে হয়েছে এগুলি আর সঠিক নয়, সেখানে সম্বন্ধ পদ পরিত্যাগ করতে চেষ্টা করেছি।পুংলিঙ্গের ভিতরে স্ত্রীলিঙ্গও অন্তভূক্ত এই চিরাচরিত রীতি পরিত্যাগ করতে আমি যথাসাধ্যা চেষ্টা করেছি। ষাট বছর আগে হয়তো এ রীতি গ্রহণীয় ছিল, অন্ততপক্ষে এ রীতি বরদাস্ত করা হতো। এখন আর অবস্তাটা সেকম নয়। তাছাড়া স্ত্রী স্বাতনন্ত্র্য বিষয়ে বারস্ট্রান্ড রাসেল তাঁর সমসাময়িকদের তুলনায় প্রগতিশীল ছিলেন। সেজন্য মনে হয় এই পরিত্যাগ করা বারস্ট্রান্ড রাসেল অনুমোদন করতেন। সেগুলির চরিত্র ততটা ভৌত নয়, যতটা দার্শনিক। অবশ্য তাঁর ভিতরে অনেক কিছুই আছে যার সঙ্গে আমি একমত নই। ফেলিক্স পিরানী
সূচিপত্র *দৃষ্টি ও স্পর্শ : পৃথিবী ও নভোমণ্ডল *কি ঘটে এবং কি পর্যবেক্ষণ করা হয় *আলোকের বেগ *ঘড়ি আর ফুটরুল *স্থান-কাল *বিশিষ্ট অপেক্ষাবাদ *স্থান-কাল অন্তর *আইনস্টাইনের মহাকর্ষীয় বিধি *আইনস্টাইনের মহাকর্ষীয় বিধির প্রমাণ *ভর, ভরবেগ, শক্তি এবং ক্রিয়া *প্রসারমান মহাবিশ্ব *প্রচলিত রীতি এবং প্রাকৃতিক বিধি বল-এর অবলুপ্তি *পদার্থ কি *দার্শনিক ফলাফল * বাট্রান্ড রাসেলের সংক্ষিপ্ত জীবনী
(১৮ মে ১৮৭২ – ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০) ছিলেন একজন ব্রিটিশ দার্শনিক, যুক্তিবিদ, গণিতবিদ, ইতিহাসবেত্তা, সমাজকর্মী, অহিংসাবাদী, এবং সমাজ সমালোচক.যদিও তিনি ইংল্যান্ডেই জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন, তার জন্ম হয়েছিল ওয়েলস এ, এবং সেখানেই তিনি ৯৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। রাসেল ১৯০০ সালের শুরুতে ব্রিটিশদের আদর্শবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব প্রদান করেন। তাকে বিশ্লেষণী দর্শনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিবেচনা করা হয়, এর অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতারা ছিলেন তার শিষ্য ভিটগেনস্টেইন এবং পূর্বসূরি ফ্রেগে এবং তাকে ২০ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম যুক্তিবিদদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রাসেল এবং হোয়াইটহেড একত্রে প্রিন্কিপিয়া ম্যাথমেটিকা নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যাতে তারা গণিতকে যুক্তির ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। তার দার্শনিক নিবন্ধ "অন ডিনোটিং" দর্শনশাস্ত্রে মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়। দুটো গ্রন্থই যুক্তি, গণিত, সেট তত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব এবং দর্শনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত যুদ্ধবিরোধী ব্যক্তিত্ব এবং জাতিসমূহের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যে বিশ্বাস করতেন। তিনি ছিলেন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী। রাসেল তার অহিংস মতবাদ প্রচারের জন্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জেলবন্দী হন, তিনি হিটলারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান, সোভিয়েত টোটালিটারিয়ানিজম এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার অংশগ্রহণের সমালোচনা করেন এবং পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে ছিলেন সর্বদা সোচ্চার। রাসেল ১৯৫০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন, যা ছিল "তার বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ রচনার স্বীকৃতিস্বরূপ যেখানে তিনি মানবতার আদর্শ ও চিন্তার মুক্তিকে ওপরে তুলে ধরেছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধবিরোধীর ভূমিকা নেন, ফলস্বরূপ তাঁকে ছ'মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। সেই সঙ্গে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের অধ্যাপক পদ থেকে বরখাস্ত হন। ১৯৫০ সালে পারমানবিক নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে আন্দোলন সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এই কারণে ১৯৬১ সালে তাঁকে আবার কারাদনণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ১৯৭০ সালে বারট্রান্ড রাসেল মৃত্যুবরণ করেন।