ভূমিকা গণিতের ভাষা মুখ্যত সাংকেতিক ভাষা, তবে সংকেত ও যুক্তি প্রসূত ভাষাই হচ্ছে গণিতের ভাষা। তার প্রয়োগ করলেই চিন্তার স্বচ্ছতা ও ঋজুতার বাহক হিসেবে তা প্রতিভাত হয়। গণিতের ভাষা প্রচলিত ভাষা থেকে স্বতন্ত্র। তবে নতুন ভাবনা-চিন্তার আঙ্গিকে গণিতের ভাষা দ্রুত পরিবতর্তিত হচ্ছে। ফলত যারা গণিতকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে ব্যাপৃত, সরাসরি গণিতের নিছক সমৃদ্ধির দিকে আগ্রহী না হলেও, এমন লোকদের কাছে গণিতকে এই ভাষার মাধ্যমে বোধগম্য করানোর প্রয়োজন আছে।
‘গণিতের রত্নভাণ্ডার থেকে’ বইটির উদ্দেশ্য হলো গণিতের বিস্তৃতি, গণিতের প্রায়োগিক দিকের প্রসার যে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে তার সাথে সবাইকে পরিচিত করানো। এর প্রতিফলন গণিতচর্চায় অবশ্যম্ভাবী। তাই প্রয়াস চলছে গণিতশিক্ষাকে এই ভবিষ্যতের গাণিতিক প্রয়োগের নিমিত্ত উপযুক্ত হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করার। এইজন্য এই বইয়ের বিভিন্ন অংশে গণিতের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। খুব জটিল ও কুটিল বিষয়গুলোকে এড়িয়ে অত্যন্ত সহজ সরল ও সাবলীল ভাষায় বিভিন্ন গণিতজ্ঞ ও তাঁদের কাজের মাধ্যমে গণিতের ভাণ্ডারে যে রত্ন জমা হয়েছে তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। ভীতি, অনীহা কাটিয়ে উঠে গণিত সর্বজন আদৃত হবে এটাই আমার প্রত্যামা। বইটি লিখতে উৎসাহ প্রদান ও সেটি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করার জন্য অনুপম প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী শ্রীমিলন নাথ মহোদয়কে বিশষভাবে ধন্যবাদ জানাই। যাঁর প্রেরণা না পেলে হয়তো বইটি লেখাই হতো না। পরিশেষে যাদের জন্য এই গ্রন্থ সেই সব পাঠক-পাঠিকাদের যদি গ্রন্থটি উপকারে আসে তবে আমার পরিশ্রম ও প্রয়াস সার্থক হবে বলে মনে করি।
সৌমেন সাহা খুলনা।
সূচিপত্র * সূচনা * গণিতের সবচেয়ে বড় হেঁয়লি : ফার্মার শেস উপপাদ্য এবং রীমান হাইপোথিসিস * পিথাগোরীয় ত্রয়ী * গণিতবিদ অয়েলার এবং তাঁর কয়েকটি গবেষণা * রেনে দেকার্ত : যিনি যুক্তিতর্কের বদলে গণিতকে ব্যবহার করে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন * নিউটন ও তাঁর নিসর্গদর্শন * আদি গণিতে শুল্ব-সূত্রের ভুমিকা * কার্ল মার্কসের গণিত ভাবনা * তর্কবিজ্ঞানে প্রতীকী ভাষা * গণিতের শর্তাধীন উক্তি * গ্রাফ তত্ত্ব * জীবগণিত * সহায়ক তথ্যসূত্র
সৌমেন সাহা ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের খুলনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব কেটেছে এই জেলাতেই। খুলনার স্বনামধন্য সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও সরকারি সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয় থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি পি.সি. কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বিজ্ঞান , প্রযুক্তি ও গণিতের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল শুরু থেকেই। সেই আগ্রহ থেকেই পাড়ি জমান সুদূর ইংল্যান্ডে। সেখানকার লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লন্ডন কলেজ অব বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এন্ড কম্পিউটিং বিভাগ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমাসহ বি.এস.সি. ডিগ্রি লাভ করেন। সৌমেন সাহা নিয়মিত বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, বিশেষত বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করেন। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, মাসিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত লেখার সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। তাঁর পেশাগত জীবনেও তিনি বিজ্ঞান গবেষণার সাথে জড়িত। খুলনার ঐতিহ্যবাহী প্রাণিক বিজ্ঞানাগার খুলনার কেন্দ্রীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। জাতীয় বিভিন্ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রকল্পের উদ্ভাবনের কারণে তিনি পুরস্কৃতও হয়েছেন। পাঠক সমাদৃত সৌমেন সাহা এর বই সমূহ হলো ‘প্রাচীন ভারতীয় গণিত ও জ্যোতির্বিদ’, ‘বৈদিক গণিতের পরিচয়’, ‘পাগল করা গণিত’, ‘যন্ত্ররা যেভাবে কাজ করে’, ‘বিজ্ঞানের জানা অজানা কথা’, ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানের সহজ পাঠ’, ‘মাথায় কত প্রশ্ন আসে’ ইত্যাদি। তাঁর লেখার মূল বিষয়বস্তু হলো বিজ্ঞান, গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান। সাধারণ পাঠকদের কথা মাথায় রেখে রচিত সৌমেন সাহা এর বই সমগ্র খুব সহজ ও সাবলীলভাবে এই জটিল বিষয়গুলো উপস্থাপন করে। বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখিতে আত্মমগ্ন এই লেখক বর্তমানে ঢাকার এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।