"পুড়িব একাকী" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ জীবনের গল্পটি তুলে এনেছি, রঙ চড়াইনি। প্রজাতির পাখা রেঙে উঠেছে মাঝে মাঝে। ফিকশন, ইতিহাস নয়। গল্প আমাদের প্রিয় কবির। বিদ্রোহ ও সুন্দরের কারণে হিন্দুরা অনুভব করছেন, মুসলমানরা আঁকড়ে ধরতে চাইছেন তাদের একমাত্র নকিব, কমরেডরা খুঁজেছেন বঞ্চিতের জয়গান উদাতাকে। মাত্র দশটি বছর সময় পান কবি তার জীবন মেলে ধরার। সাম্প্রদায়িক মিলনের স্বপ্ন ছিল তার। চুরমার করে দিতে ছুটে আসে মহাযুদ্ধ, মন্বন্তর, দাঙ্গা। প্রতিকূল সময়ের ঝড়ে পাল তােলে হিংসা-অপবাদের ছুরি, অপমান। বিক্ষত কবিমনকে ধীরসন্তর্পণে গ্রাস করে দারিদ্র্য, আঘাত, ব্যাধি। সম্প্রদায়ের সমঝােতা না হতেই দেশভাগ। উপন্যাসের ময়ুরপঙ্খী কখনও চলে দুলকি চালে বাতাসের আবর্তে, কখনও ফিকশনের ক্ষরস্রোতে; স্বগত উচ্চারণে, কবিতায়, গানে, ভাষণে। বাঙালি হিন্দু ও মুসলিম মানসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত যে কবি, প্রবাহিত তিনি নিজ দুঃখনদীতে। কেউ নিতে পারেননি সে দুঃখভার। ময়লা কথা ময়লা বাক্সে। শেষের দিনে ঘাড়ে মাথায় নিয়েছেন আঘাত। পিতৃবন্ধু কে. মল্লিক এর কথন সত্যি বলে গ্রহণ করেছি। বেশ কিছুদিন থেকেই তিনি অসুস্থ, আর ঐ দিন থেকে তার অসুস্থতা বেড়েই চলে, চিকিৎসা হয় বহুদিন ধরে, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন নির্বাক। আপনার মনে পুড়েছেন একাকী গন্ধবিধূর ধুপ। এরপর আর গল্প নেই। সবার আগ্রহ অন্তর্গত মানুষটির গল্পে, কবিপ্রাণে। সমসাময়িকদের স্মৃতিবাসরে সযতনে কুড়িয়েছি সংলাপ। পথ গিয়েছে বেঁকে, দু'ধারের তৃণলতাও কথা বলে উঠেছে। ইথারে ভেসে বেড়ায় স্বগত সংলাপ। কথা ছিল তার গানের ভাষণের আড়াল। কেউ খুঁজবেন স্থান কাল পাত্র। শুধু মূল সুর খোজার চেষ্টা করেছি।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী (জন্ম: ৮ ডিসেম্বর, ১৯৩৬) একজন বাংলাদেশি সঙ্গীতজ্ঞ এবং সঙ্গীত বিষয়ক অধ্যাপক ও গবেষক। তিনি লোক সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার আব্বাসউদ্দীন আহমদের কনিষ্ঠপুত্র। সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হন এবং লেখালেখির স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ। তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির "কাজী নজরুল ইসলাম এবং আব্বাসউদ্দীন আহমদ গবেষণা ও শিক্ষা কেন্দ্র" এর গবেষক। নজরুল ইসলামকে নিয়ে তার কাজের জন্য তিনি ২০১৩ সালে নজরুল মেলায় আজীবন সম্মাননা লাভ করেন। তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বড় ভাই মোস্তফা কামাল ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। তার বোন ফেরদৌসী রহমান একজন সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পী। আব্বাসী ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ মুহম্মদ হোসেন খসরু এবং ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খাঁর নিকট সঙ্গীতের তালিম গ্রহণ করেন। তিনি মোট ৫০টি বই রচনা/সম্পাদনা করেন। তিনি ভাওয়াইয়া গানের উপর দুটি বই প্রকাশ করেন যার মধ্যে ১২০০ গানের উল্লেখ রয়েছে। তিনি আমার ঠিকানা এবং ভরা নদীর বাঁকে টেলিভিশন অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেছেন। অনুষ্ঠান দুটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হত।