শিক্ষা বিষয়ে আগ্রহী পাঠকেরা জানেন যে, পরমেশ আচার্যের আলোচনায় একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি তথা বহুস্তরীয় বহুকৌণিক বিশ্লেষণ বর্তমান। বলা বাহুল্য, দেশজ শিক্ষাধারার শক্ত ভিতের ওপর আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে তিনি বিচার করেন শিক্ষার দেশীয় চালচিত্র। তার প্রবাদপ্রতিম গ্রন্থ 'বাংলার দেশজ শিক্ষাধারা'-র ধারাবাহিকতায় 'বাঙালির শিক্ষাচিন্তা' শীর্ষক এই গ্রন্থটিতে তিনি যেমন ভারতীয় শিক্ষাচিন্তা কতটা বিশ্বজনীন তার পটভূমিকায় বাঙালি শিক্ষা-চিন্তকদের শিক্ষাচিন্তা নিয়ে আলোচনা করেছেন তার পাশাপাশি বিংশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাবিস্তারের ইতিহাসে যে সাম্প্রদায়িক সমস্যা দেখা দিয়েছিল তার পর্যালোচনা করেছেন, আবার, অবিভক্ত বাংলায় আধুনিক শিক্ষা প্রচলনের প্রথম যুগের কিছু পরিচয় যেমন দিয়েছেন তেমনি স্বাধীনোত্তরকালে যে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের চেষ্টা হয় তার সামাজিক-রাজনৈতিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছেন; তার পাশাপাশি স্বাধীনতার আগে কেন্দ্রীয় শিক্ষা-উপদেষ্টা কমিটির স্বাধীন ভারতের শিক্ষানীতি নির্ধারণের প্রয়াস যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল তার আলোচনা যেমন করেছেন, তেমনি আবার স্বাধীন ভারতের শিক্ষাবিস্তারের প্রেক্ষাপটে তিনি পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার এক অনুপুঙ্খ চালচিত্র উপস্থাপন করেছেন। তার আলোচনায় স্বাধীনোত্তর কালে শিক্ষানীতি ও শিক্ষাবিস্তারের সামাজিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা যেমন ঘুরেফিরে এসেছে তার পাশাপাশি হাল আমলের বিষয় যেমন বাজার অর্থনীতির দাপটে শিক্ষাব্যবস্থার কী হাল, এ নিয়েও তিনি সমৃদ্ধ আলোচনা করেছেন। এই বিরল দৃষ্টিভঙ্গি সম্বলিত শিক্ষার প্রতিটি আনাচ-কানাচের চালচিত্র ও বিশ্লেষণ শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষার ছাত্রদেরই উপকৃত করবে না বরং চিন্তাশীল শিক্ষক নাগরিকদেরও সমৃদ্ধ করবে বলে আমরা আশাবাদী।