ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা ট্রাফিক বাতি বদলের অপেক্ষায় গাড়িতে থাকা অবস্থায় অন্ধ হয়ে গেল প্রথম জন। তাকে অপথালমোলজিস্টের কাছে নিয়ে গেল তার স্ত্রী। ব্যাপারটার মাথামুণ্ড কিছুই বুঝতে পারল না ডাক্তার-রাতে টেক্সট বই পড়ার সময় অন্ধ হয়ে গেল সেও। দ্রুত মহামারীতে পরিণত হতে চলা রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পূর্ণাঙ্গ কোয়ারেস্টাইনের উদ্দেশ্যে অন্ধদের জড়ো করে এক পরিত্যক্ত উন্মাদ আশ্রমে আটক করল সরকার : এক উইংয়ে অন্ধ আর অন্য উইংয়ে রাখা হলো ওদের সংস্পর্শে যারা এসেছে তাদের। কিন্তু মহামারী তাতে ঠেকানো গেল না। নিজেদের সংগঠিত করে তুলল অন্ধরা যা মোটেই ইউটোপিয় ধরনের নয়।তারপরও চার দেয়ালের বাইরে ছড়িয়ে পড়ল অন্ধত্ব। কেবল সেই ডাক্তারের স্ত্রী ছাড়া রেহাই মিলল না কারও। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা এড়াতে নিজেকে অন্ধ দাবি করছে ও।নিউক্লিয়াস হলো ওই। তিনজন পুরুষ, তিনজন মহিলা, একটা ছেলে আর একটা কুকুর-যাদের বিশেষ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা হয়েছে এই বইতে।এই উপন্যাসে সত্যিকারের দুঃস্বপ্ন সৃষ্টি করেছেন হোসে সারামাগো। সমাজবদ্ধ জীবন যাপনের এক সামগ্রিক কাঠামো ধ্বংস এবং একে একে পারস্পরিক সহযোগিতা ও দায়িত্ব ছিন্ন হয়ে পড়ার প্রেক্ষপটে এক অগ্রসর নাগরিক সমাজ পরিণত হলো বর্বর সমাজে। সযত্নে রচনা, যতিচিহ্নের আরোপিত অনুপস্থিতি ও কালের সামঞ্জস্যতা পাঠককে সূক্ষ্ণ অর্থের দিকে মনোযোগ দিতে বাধ্য করে। চ্যালেঞ্জিং চিন্তা জাগানিয়া, পরহাসময় পরিণত উপন্যাস, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেকোনও ভাষায় প্রকাশিত উপন্যাসের ক্ষেত্রে যা বিরল।
হােসে সারামাগাের জন্ম ১৯২২ সালের ১৬ নভেম্বর পর্তুগালের আজিহাগা গ্রামের এক কৃষক পরিবারে। তার লেখক জীবন শুরু ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত পাপের জমিন উপন্যাস দিয়ে। এরপর দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর আর সাহিত্যচর্চা করেননি তিনি। ১৯৭৬ সালে তাঁর দ্বিতীয়। উপন্যাস চিত্রকলা ও লিপিকলার সারগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। স্বয়ং সারামাগাে ও সমালােচকবৃন্দ প্রথমদিকের রচনার গঠনমূলক দিক ও স্বতন্ত্র মানের ওপর বেশি গুরুত্ব প্রদান। করলেও তার অধিকাংশ পাঠক ১৯৮২ সালে লেখা ঐতিহাসিক উপন্যাস বাতাসার ও ব্লিমুন্ডা-কে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এই উপন্যাসটিই তার পাঠকপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়। ১৯৯১ সালে তার যিশু খৃষ্টের একান্ত সুসমাচার প্রকাশিত হলে দারুণ হৈচৈ পড়ে যায়। বইটি ক্যাথলিকদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে, এই অজুহাতে পর্তুগিজ সরকার ইউরােপীয় সাহিত্য পুরস্কার এর জন্য বইটি বিবেচনার বিরােধিতা করে। তখন সারামাগাে ও তার স্ত্রী স্পেনের ল্যানজারাে দ্বীপপুঞ্জে পাড়ি জমান ও সেখানে বসবাস করতে থাকেন। ১৯৯৫ সালে তার অন্ধত্ব, ১৯৯৭ সালে সেইসব নামগুলাে ও ২০০০ সালে গুহা প্রকাশিত হয়। এইসব রচনা দার্শনিক নীতিগর্ভ রূপককাহিনী সমৃদ্ধ যা তার পূর্বেকার রচনার সাথে যথেষ্ট পার্থক্য বহন করে। ১৮ জুন ২০১০ সালে হেসে সারামাগাে মৃত্যুবরণ করেন।