"গরিবি অমরতা" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: সেই কবে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সংশয় প্রকাশ করে লিখেছিলেন“বাংলা ছােটগল্প কি মরে যাচ্ছে?” বিস্তর গল্প লেখা হচ্ছে বটে কিন্তু চোরাস্রোতের মতাে সেই সংশয় বহমান আছে বরাবর। তবু যে কতিপয় গল্পকারের গল্প পড়লে সেই সংশয় কেটে যায়, সুমন রহমান তাদের মধ্যে একজন। তার প্রথম গল্পের বই গরিবি অমরতা পড়তে গিয়ে এমন একটা পাটাতনে দাঁড়াই যেখান থেকে বাংলাদেশের জীবনের জঙ্গমতা দেখতে পাই স্বতন্ত্র ভঙ্গিতে, ভাষায়। ভাবি, কবরস্থ মৃত বাবার সঙ্গে ধর্ম, কাব্য নিয়ে হৃদয়-নিংড়ানাে এমন বাহাস আর কোথায় বা পড়েছি? কোথায় বা জেনেছি যে, গােরস্থানের ঘুমন্ত হিরােইন-খােরদের দেখে কবরবাসীদের ভেতর ঈর্ষা জাগে! মেধাবী ভঙ্গিতে সুমন আল্টা পুওর আর জিনি ইনডেক্সের উন্নয়ন বয়ানের ভঁজে গুঁজে দেন প্রেমের গল্প, থেমে-যাওয়া ঘড়ি আর থেমে-যাওয়া বয়সের উছিলায় খোঁজ দেন দেশের রাজরীতির; শােনান দুই সহােদরার জীবনে পানের বরজের ভেতর একটা সবুজ ঢোঁড়া সাপের মতাে ঢুকে পড়া এক গরিবি চেহারার তরুণের যৌনকাতরতার গল্প; কিংবা ফুটপাতের এক খুচরাে নারীর আশ্চর্য মমতা, প্রেম আর ছলনার কথা। ভাবি সুমনের মাধ্যমেই কি ডেঙ্গু মহামারি আতঙ্ক বাংলা সাহিত্যে জায়গা করে নিলাে প্রথম? তার গল্পে প্রগতিশীলতার, উত্তরাধুনিকতার, বা যাদুবাস্তবতার কোন আগাম বােঝা নেই। গল্পে কোন কিছু প্রমাণের দায় নেই তার, বরং আছে বিশ্বায়নের যুগে এস্ততায় কাঁপতে থাকা বাংলাদেশকে তুলে ধরার আকুতি। সেই তুলে ধরার কাজটি সুমন করেছেন কথিত মান ভাষা এবং অপ্রমিত ভাষার সফল যুগলবন্দিতে। ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে সুমন রহমানের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ নিরপরাধ ঘুম এবং তিনি প্রমাণ রেখেছেন পূর্বসুরীদের গল্প ঐতিহ্যকে পুনরুৎপাদন করছেন না তিনি, তৈরি করছেন নিজস্ব সাহিত্য পথ । সুমন রহমানের নতুন গল্প পাঠের তৃষ্ণা জাগরুক রইল । অক্টোবর ২০১৯ শাহাদুজ্জামান
সুমন রহমান-এর জন্ম ১৯৭০ সালে কিশােরগঞ্জ জেলার ভৈরবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। উন্নয়ন অধ্যয়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। দক্ষিণ এশীয় অধ্যয়ন নিয়ে পড়াশুনা করেছেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরে। সর্বশেষ পিএইচডি করেছেন সাংস্কৃতিক অধ্যয়নে, অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড থেকে। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস। বাংলাদেশের গণমাধ্যম অধ্যয়ন ও সাংবাদিকতা বিষয়ের অধ্যাপক। সাহিত্যের সব শাখাতেই সমানভাবে স্বচ্ছন্দ সুমন রহমান। দুটো কবিতাগ্রন্থ, দুটো গল্পগ্রন্থ ও একটি প্রবন্ধগ্রন্থ রয়েছে তার। ছােটগল্প “নিরপরাধ ঘুম” এর জন্য ২০১৬ সালে কমনওয়েলথ ছােটগল্প পুরষ্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় এসেছিল তার নাম। “নিরপরাধ ঘুম” গল্পগ্রন্থটি ২০১৯ সালে প্রথম আলাে বর্ষসেরা বই পুরষ্কার পায়।