“আগরতলা মামলা, শেখ মুজিব ও বাংলার বিদ্রোহ" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ ষাটের দশকের শেষের দিকে পাকিস্তানি সামরিক শাসকগােষ্ঠী দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, সামরিক বাহিনীর সদস্য ও প্রশাসনিক কিছু কর্মকর্তাকে জড়িয়ে যে মামলা দাঁড় করিয়েছিল, তারা তাকে অভিহিত করেছিল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা' নামে। এই মামলার মূল লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রদ্রোহিতার ধুয়া তুলে অভিযুক্তদের ফাঁসির কাঠে ঝুলিয়ে বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের সংগ্রামকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়া। কিন্তু অচিরেই এই মামলা বুমেরাং হয়ে আঘাত হানে পাকিস্তানি সামরিক শাসকদেরকেই। কুর্মিটোলা সেনা ছাউনির সুকঠোর প্রহরায় এই মামলার বিচারানুষ্ঠানে সওয়ালজবাবের প্রথম দিন থেকেই শেখ মুজিবুর রহমানসহ অভিযুক্ত সকলের বীরদপী ভূমিকা, আইনজীবীদের সুতীক্ষ্ণ জেরা এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিবরণ, গােটা বাঙালি জাতিকে উদ্দীপ্ত করে তােলে অনাপােস স্বাধিকার প্রেরণীয়। মামলার অন্য আর সব সংবাদ-ভাষ্যের ভেতরে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল দৈনিক আজাদ' পত্রিকার সেই সময়কার চিফ রিপাের্টার ফয়েজ আহমদ-এর লেখা ট্রাইবুনাল কক্ষে'। এই কলাম তিনি লিখেছিলেন যাবতীয় আইনি গণ্ডিবদ্ধতা ও শাসকদের শ্যেনদৃষ্টি এড়িয়ে এমন এক ভাষাভঙ্গি যােগে, এমন আভাষ ও ইঙ্গিতের আশ্রয়ে যার ভেতর দিয়ে মামলার প্রকৃত উদ্দেশ্য তির্যক আলােকচ্ছায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে প্রতিদিন, এই গ্রন্থের যা সারবান অংশ। দীর্ঘ পচিশ বছর পর বর্তমানের প্রেক্ষাপটে এই মামলার পুনর্মূল্যায়ন করতে গিয়ে স্বৈরশাসনামলে যেসব কথা স্পষ্টভাবে উচ্চারণ সম্ভব ছিলাে না, তার সত্যরূপ আবার উদঘাটন করেছেন ফয়েজ আহমদ। বাঙালির এই বিদ্রোহ-প্রচেষ্টার তথ্য প্রমাণাদিসহ প্রণীত এই গ্রন্থ আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি নির্মাণের দীর্ঘ ধারাবাহিকতার এক নতুন পরিচয় মেলে ধরেছে, যা দাবি করে। ইতিহাসের অনিবার্য পুনর্লিখন। ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ এই গ্রন্থ। স্বয়ং এক বিস্ফোরণ।
তিনি সারাজীবনই প্রধানতঃ শিশু-কিশােরদের জন্য ছড়া। ও কবিতা লিখেছেন। বর্তমানে তাঁর বইয়ের সংখ্যা ১০০। এর মধ্যে ৫০টি শিশু-কিশােরদের জন্য ছড়া ও কবিতার পুস্-ক। অধ্যাপক কবীর চৌধুরী তাঁর চারটি শিশুপু-ক ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। তাঁর লেখা। ছড়া নিয়ে এশটি আব"ত্তি ও এশটি সঙ্গীতের ক্যাসেট বেরিয়েছে। তাঁর বইগুলাের মধ্যে মধ্যরাতের অশ্বারােহী’ ট্রিলজী সবচাইতে বিখ্যাত। এটি তাঁর শ্রেষ্ঠ পুস্-ক বলে বিবেচিত ছড়ার বইয়ের মধ্যে হে কিশাের', কামরল হাসানের চিত্রশালায়’, ‘গু"ছয়ড়া, ‘রিমঝিম’, ‘বোঁ বোঁ কাটা’, ‘পুতলি’, ‘কালে যাঁর কামান’, ‘টুং’, ‘জোনাকী’, ‘ড়ি নেই’, ‘ছােট ছেলে জামারে’, ‘প্রিয়ং’, ‘তুলির সাথে লড়াই’, ‘টিউ টিউ’, ‘একালের ছড়া’, ‘য়ড়ায় ছড়ায় ২০০' বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। চীনসহ বিভিন্ন দেশের কবিতার পাঁচটি বই তিনি অনুবাদ করেছেন। এর মধ্যে হাে চি মিন’ -এর জেলে কবিতা বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। দশটি দেশের অনুবাদ কবিতার বই-এর নাম ‘দেশা-রের কবিতা'। মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভে প্রেসকাবে রাতে ২৫শে মার্চ আশ্রয় নিয়ে তিনি পাকিস্-নী বাহিনীর আক্রমনে আহত হন। রাত ১১টায় আশ্রয় নেবার ভাের রাতে ঔ ২৪ ট্যাংক দিয়ে শত্র"বাহিনী প্রেসকাবে তাঁর আশ্রয় ক েদোতলায় গােলাবর্ষণ করে। তিনি বাঁ উর"তে আঘাত পেয়ে মেঝেতে পড়ে থাকেন। ১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চ সকাল দশটায় কারফিউ ওঠার পর তিনি চিকিৎসার জন্য বেরিয়ে যান।