ফ্ল্যাপে লিখা কথা আবুল কাসেম ফজলুল হকের লেখা তথ্যনির্ভর ও চিন্তাসমৃদ্ধ। চিন্তার জন্য কিংবা কেবল আনন্দের জন্য চিন্তা তিনি করেন না। এক উন্নত বাংলাদেশে এবং উন্নত পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন তিনি। বাংলাদেশে চিন্তার সঙ্গে কর্মের সংযোগের প্রয়োজন তিনি তীব্র ভাবে অনুভব করেন। বাংলাদেশের জনগণের ও মানব জাতির প্রগতি নিয়ে পরম আশা আছে তাঁর মনে। ইতিহাস, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ,সমাজবিজ্ঞান ,মনোবিজ্ঞান,নীতিবিজ্ঞান ,সংস্কৃতি,সভ্যতা,সাহিত্য তত্ত্ব,সৌন্দর্যতত্ত্ব ইত্যাদি জ্ঞান শাখার ধারা ধরে তিনি ব্যক্তি ,সমাজ, জাতি রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যবস্থার মহান দিকগুলোকে ফুটিয়ে তোলেন। প্রবল প্রতিকূলতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে মানবীয় মহত্ত্বের অন্তহীন সম্ভাবনাকে তিনি উন্মোচন করেন। তাঁর চিন্তা একই সঙ্গে a method of inquiry এবং a mode of action। চতুষ্পার্শ্বের নিদারুণ চরিত্রদৈন্যের মধ্যে তিনি চরিত্রবল সৃষ্টিতে প্রয়াস পর। তাঁর এসব বৈশিষ্ট্যের উজ্জল প্রকাশ আছে এ-গ্রন্থের লেখাগুলোতেও। বিবেকবান, যুক্তিপরায়ণ, স্বাধীনচিত্র, সাহসী,চিন্তাশীল, দূরদর্শী প্রগতিবাদী লেখক তিনি। এ গ্রন্থ তাঁর ব্যক্তিত্বের এই বৈশিষ্ট্যকে স্পষ্টতর করে। বাংলাদেশকে সুস্থ ,স্বাভাবিক, স্বাধীন,সার্বভৌম,শক্তিমান, সমৃদ্ধিমান,প্রগতিশীল রাষ্ট্র রূপে গড়ে তোলার আন্তরিক তাগিদ কাজ করছে প্রতিটি লেখার পেছনে।
ভূমিকা এই লেখাগুলো পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল ;কিছুটা পরিমার্জিত রূপে গ্রন্থিত হলো। প্রতিটি লেখাতেই কিছু সংযোজন-বিয়োজন ও করা হয়েছে। আমার চিন্তার স্বাতন্ত্র্য এই লেখাগুলোতেও বজায় আছে বলে মনে করি। ‘মুজিব ভাই’ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ দৈনিক যুগান্তরে ,বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা ও মানুষের অমানবিকীকরণ, ‘নাচের পুতুল হয় কি মানুষ তুললে উঁচু করে’ এবং বাংলাদেশের মূল দুই দুর্বলতা দৈনিক যায়যায়দিনে, জাতীয় উন্নতির ইত্তেফাকে, ইতিহাসের গতি নির্ধারণে সংবাদপ্রত এবং রণদা প্রসাদ সাহা: ঐহিক অমরতা লোকালয়ে আর ডিরোজিও : জন্মদ্বিশতবর্ষে মানিক উত্তরাধিকারে প্রকাশিত হয়েছিল। এক একটি লেখা আলাদা আলাদা ভাবে প্রকাশিত হলে যেমন থাকে পরিমার্জিত রূপে গ্রন্থিত হয়ে অন্য লেখার সঙ্গে প্রকাশিত হলো তা থেকে ভিন্ন হয়ে ওঠে। এ-গ্রন্থেও হয়তো তাই রয়েছে। পাঠককে আনন্দ দেওয়ার জন্য যাঁরা লেখেন, আমি তাদের একজন নই। আমার লেখা পাঠকের মনে কর্মের প্রেরণা সৃষ্টি করুক এটা আমি কামনা করি। বাংলাদেশে এবং পৃথিবীতে মানুষের জীবন অনেক সমৃদ্ধ, সুন্দর ও আনন্দময় হয়ে উঠতে পারে এমনটা সব সময় আমার মনে হয়। মনে হয়, সম্মিলিত চেষ্টা দ্বারা মানুষ মহান সব সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে পারে। এ-রকম উপলব্ধি থেকেই আমার এসব লেখা-আমার সব লেখা। পাঠকদের থেকে খুব বেশি আশা করি আমি। পাঠকদের মনোযোগ পেলেই এসব লেখা আমাদের জাতীয় জীবনে সার্থক হবে। আবুল কাসেম ফজলুল হক
সূচিপত্র * ‘মুজিব ভাই’ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ * বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা ও মানুষের অমানবিকীকরণ * ইতিহাসে গতি নির্ধারণের সংবাদপত্র * ডিরোজিও :জন্মদ্বিশতবর্ষে * রণদা প্রসাদ সাহা: ঐহিক অমরতা * ‘নাচের পুতুল হয় কি মানুষ তুললে উঁচু করে’ * স্বৈরাচার প্রসঙ্গে * জাতীয় উন্নতির পরিকল্পনা প্রসঙ্গে * বাংলদেশের মূল দুই দুর্বলতা
Abul Kashem Fozlul Haque আবুল কাসেম ফজলুল হক ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর গোটা পেশাজীবন কাটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে গবেষণা ও শিক্ষকতায়। ২০১১ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি কবিতা, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ লিখেছেন এবং পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। তখন তাঁর লেখার বিষয়বস্তু ছিল সৌন্দর্য, প্রেম, প্রকৃতি ও জীবনদর্শনের অনুসন্ধিৎসা। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় তাঁর মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালে তিনি ১৯৬০-এর দশকে ছাত্র-আন্দোলনের প্রগতিশীল ধারায় সক্রিয় ছিলেন। সংস্কৃতি সংসদ, সুকান্ত একাডেমি, উন্মেষ, বাংলাদেশ লেখক শিবির, স্বদেশ চিন্তা সঙ্ঘ প্রভৃতি সংগঠনে থেকে তিনি বাংলাদেশের প্রগতিশীল চিন্তা ও কর্মে সক্রিয় ছিলেন এবং সর্বজনীন কল্যাণ ও প্রগতিশীল নতুন ভবিষ্যতের আশায় ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে লিখে চলছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ঢাকা শহরে থেকে পরিচিত ও স্বল্পপরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানত অর্থ সংগ্রহ করে দিয়ে ও আশ্রয় দিয়ে সহায়তা করেছেন। আবুল কাসেম ফজলুল হক ১৯৬০-এর দশক থেকে নতুন রেনেসাঁস আকাক্সক্ষা করেন। তিনি মনে করেন ভালো কিছু করতে হলে হুজুগ নয়, দরকার গণজাগরণ। সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস ইত্যাদি সকল বিষয়ে তাঁর লেখায় প্রগতির তাড়না কাজ করে।