ফ্ল্যাপে লিখা কিছু কথা হুমায়ূম আহমেদের ৬৪তম জন্মদিন উদযাপন অংশ হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর স্মারক গ্রন্থ্। এই বয়সে তাঁর চলে যাওয়ার কথা ছিল না। কালান্তক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার পরেও সবাই যখন আশা করছে যে, তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন আমাদের মধ্যে, তখনই তিনি চলে গেলেন। জীবনে যেমন, মরণেও তেমনি হুমায়ূন আহমেদ অসামান্য হয়ে রইলেন মানুষের হৃদয়-নিংড়ানো ভালোবাসায়,স্বত:স্ফূর্ত শোকাচ্ছ্বাসে। তাঁর স্মৃতিচারণ করে কিংবা তাঁর সাহিত্যের আলোচানা করে নানা পত্রপত্রিকায় তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন কবি ও ছড়াকার,গল্পকার ঔপন্যাসিক,প্রাবন্ধিক ও সমালোচক, সাংবাদিক ও সম্পাদক, গায়ক ও সুরকার,সংগীত পরিচালক ও টেলিভিশনের প্রযোজক,নাট্যভিনেতা ও নাট্য পরিচালক,চিকিৎসক ও স্থপতি,সহযোগী ও সহকর্মী,সহপাঠী ও আত্নীয় পরিজন।মূলত এসব লেখাই সংকলিত হয়েছে বর্তমান গ্রন্থে। বেশ কিছু নতুন লেখাও যুক্ত হয়েছে। তাঁকে হারাবার দুঃখ,তাঁর বিশালতার আভাস,তিনি কেমন করে ছুঁয়ে গেলেন আমাদের জীবন, রাঙ্গিয়ে গেলেন, মাতিয়ে গেলেন, তারই পরিচয় এতে তুলে ধরা হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ যে কালজয়ী হবেন, সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ আমাদের নেই। এর কারণ, নিজের কালকে তিনি প্রবলভাবে আলোড়িত করতে সমর্থন হয়েছিলেন। মানুষের হৃদয়ে তিনি স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। এই সংকলন একইসঙ্গে তাঁর পরিচিতি এবং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি স্বরুপ। সূচি *আয়েশা ফয়েজ/সোনার পুতলা *আতাউর রহমান/শিল্প-সাহিত্যের অনন্য কর্ণধার *আন্দালিব রাশদী/আমার হুমায়ূন আহমেদ *আনিসুজ্জামান/তুমি রবে নীরবে *আনিসুল হক/আমাদের স্বপ্নের কারিগর *আবদুল্লাহ্ নাসের/তাঁকে ভাবলেই কাহিনিরা ভিড় করে *আবদুশ শাকুর/গল্প বলিয়ে হুমায়ূন আহমেদ *আবেদ খান/পথভোলা এক পথিক *আমীরুল ইসলাম/হুমায়ূন আহমেদ: শিশু সাহিত্যের রাজা *আলম তালুকদার /নুহাশপল্লী থেকে কুতুবপুর *আলী যাকের/বৃক্ষরাজিতে ঠিকানা এবং বৃক্ষ হননের মহোৎসব *আসাদুজ্জামান নূর/দেখা-অদেখায় হুমায়ূন আহমেদ *আহসান হাবীব/মহান ফিহা *ইমদাদুল হক মিলন/আমাদের হুমায়ূন আহমেদ *এইচ এম মনিরুজ্জামান/হুমায়ূন –সান্নিধ্যে মুহসিন হলের দিনগুলি *এম এ করীম/বগুড়া জেলা স্কুলের বাচ্চু *গোলাম মুরশিদ/হুমায়ূন আহমেদ *গোলাম সারওয়ার/মহাসিন্ধুর ওপারে তুমি *জাহিদ হাসান/ভালো থাকুন *জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী/হুমায়ুন আহমেদ: এক অনন্য উদাহারণ *জুয়েল আইচ/আমাদের শান্তা ক্লজ *জ্যোতি প্রকাশ দত্ত/মনে পড়ে,রকি মাউনটেনে হাই *ধ্রুব এষ/হুমায়ূন আহমেদ এবং আমাদের প্রচ্ছদ *নওয়াজীশ আলী খান/হুমায়ূনের প্রথম প্রহর….. *নাসরীন জাহান/ঝকঝকে রোদ শেকড়হীন চাঁদ আর হুমায়ূন আহমেদের গভীর মৃত্যুবোধ *নাসির আলী মামুন/রহস্যকার হুমায়ুন আহমেদ *নিয়াজ জামান/বাংলাদেশের হৃদয়ে হুমায়ূন *পূরবী বসু/জ্যোৎস্না,বৃষ্টি আর অন্ধকারের গল্প *ফরিদুর রেজা সাগর/জীবনবাদী হুমায়ূন আহমেদ *বিনায়ক সেন/মধ্যাহ্নের সমাজ *বেলাল চৌধুরী/দুই গগনের দুই তারকা *মকসুদ জামিল মিন্টু/এক ক্ষণজন্মা মানুষ হুমায়ূন আহমেদ *মতিউর রহমান/হুমায়ূনের যুদ্ধ *মফিদুল হক/রুপবদলের নায়ক হুমায়ূন আহমেদ *মহাদেব সাহা/হুমায়ূনের জন্য অশ্রু আর ভালোবাসা *মাজাহারুল ইসলাম/কেন পিরিতি বাড়াইলেরে বন্ধু, ছেড়ে যাইবা যদি *মাহবুব আজীজ/জীবন ও মৃত্যু:হুমায়ূন আহমেদের বেঁচে থাকার লড়াই *মাহমুদ আল জামান/হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কিছু কথা *মুনিয়া মাহমুদ/আমি পূর্ণিমার চাঁদ ছুঁয়েছি *মুনীর আহমেদ/হুমায়ূন আহমেদ ও যত কথা *মুম রহমান/মায়াবী গল্পের মানবিক জাদুকর *মুস্তফা জামান আব্বাসী/হুমায়ূন আহমেদের গান *মুহম্মদ নুরুর হুদা/হুমায়ূননামা-র জন্যে *মোকারম হোসেন/হুমায়ূন আহমেদের বৃক্ষ-ভূবন *মোমিন রহমান/হুমায়ূন আহমেদ:চলচ্ছিত্র বিষয়আশা *মোহাম্মদ হান্নান/হুমায়ূন আহমেদের ধর্মচেতনা *রাবেয়া খাতুন /যাকে হারালাম *রিজিয়া রহমান/একজন-বহুজন হুমায়ূন *রেজানুর রহমান/ফ্লাশব্যাক *শফি আহমেদ/নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ *শহিদ হোসেন খোকন/এসেছিলে তবু আসো নাই *শাওন/হুমায়ূনের টেপরেকর্ডার *শাকুর মজিদ/মরিলে কান্দিস না ও হুমায়ূন আহমেদ *শামসুজ্জামান খান/হুমায়ূন আহমেদকে যে ভাবে দেখি *শাহাবুদ্দিন আহমেদ/সিংহহৃদয় হুমায়ূন আহমেদ *শিহাব সরকার/নিঃসঙ্গ ভুবনে হুমায়ূন আহমেদ *সরদার আব্দুস সাত্তার/হুমায়ূন কান পেতে শুনছি আপনার ‘অন্ধকারের গান’ *সালেহ চৌধুরী/হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রেরা *সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী/হুমায়ূন কে স্মরন করা *সিরাজুল কবির চৌধুরী কমল/হুমায়ূন আহমেদের বডিগার্ড *সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম/সে বড় অদ্ভুদ সময় ছিল *সৈয়দ শামছুল হক/হুমায়ূন আহমেদ: তাঁর চলে যাওয়া *হামিদ কায়সার/হুমায়ূন আহমেদের অচিনপুর:একটি সরল পাঠ *হামীম কামরুল হক/হুমায়ূন আহমেদের শূন্যতার শিক্ষা *হাসান হাফিজ/নয়েনের মাঝখানে নিয়েছে যে ঠাঁই…..
আনিসুজ্জামান একাধারে একজন বরেণ্য শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক, ভাষা সংগ্রামী, সংবিধানের অনুবাদক এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক। এককথায় তিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। এই গুণীজন ১৯৩৭ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে এক উচ্চশিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বর্ণাঢ্য শিক্ষাজীবন শুরু হয় কলকাতার পার্ক সার্কাস হাই স্কুল থেকে। কৈশোরে পরিবারসমেত বাংলাদেশে চলে আসলে খুলনা শহরের এক স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে ঢাকার প্রিয়নাথ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৫৩ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন আনিসুজ্জামান। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। স্নাতক জীবনে তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং ড. মুনীর চৌধুরীর মতো কিংবদন্তি শিক্ষকদের, যাদের সান্নিধ্যে তিনি নিজেকে গড়ে তোলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শুরু করেন এবং ১৯৬৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন। অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য বিভিন্ন সময়ে তিনি বেশ কিছু বৃত্তি লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি শরণার্থী শিক্ষকদের সংগঠন 'বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি'র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পে অংশ নেন এবং 'কমনওয়েলথ অ্যাকাডেমি স্টাফ ফেলো' হিসেবে লন্ডন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করেন। বর্তমানে তিনি শিল্প ও সাহিত্যকলার বিভিন্ন শাখায় জড়িত আছেন। আনিসুজ্জামান এর বই সমগ্রতে তার প্রখর চিন্তাশক্তি ও বিশ্লেষণী ক্ষমতার পরিচয় মেলে। আনিসুজ্জামানের বইগুলো বেশিরভাগই গবেষণা এবং প্রবন্ধধর্মী। আনিসুজ্জামানের প্রবন্ধ এবং গবেষণা গ্রন্থগুলো হচ্ছে ‘মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য’, ‘আমার একাত্তর’, ’সোশ্যাল এস্পেক্টস অব এন্ডোজেনাস ইন্টেলেকচুয়াল ক্রিয়েটিভিটি’ ইত্যাদি। আনিসুজ্জামান এর বই সমূহ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো 'সাহিত্যে ও সমাজে', 'কালচার এন্ড থট', 'নারীর কথা', 'আইন-শব্দকোষ' ইত্যাদি। তিনি অসংখ্য পদক-পুরস্কার এবং সম্মাননা লাভ করেছেন। সেসবের মধ্যে ১৯৭০ সালে প্রবন্ধ-গবেষণার জন্য ‘বাংলা অ্যাকাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ১৯৮৫ সালে শিক্ষায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ‘একুশে পদক’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ২০০৫ সালে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘ডি.লিট’ ডিগ্রি প্রদান করে। ২০১৪ সালে তিনি ভারত সরকার প্রদত্ত 'পদ্মভূষণ' পদক লাভ করেন।