"গ্রামসি পরিচয় ও তৎপরতা" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ গ্রামসি পাঠের মাধ্যমে আমাদের রাজনৈতিক চিন্তা আরাে পরিপক্ক হয়। বদলে যায় চিন্তার গতিমুখ, শৈলী ও সমূহ রাজনৈতিক প্রকল্প। ২০ শতকের দ্বিতীয় অর্ধের ‘চিন্তা’, প্রতি মুহূর্তের আধুনিক পৃথিবীর বাস্তবতা মােকাবেলা, মার্কসের চিন্তার উত্তরাধিকার থেকে যুতসই অবস্থান- এরূপ প্রেক্ষিতে তিনি মার্কসকে পুনরায় পড়া এবং নতুনভাবে পড়ার ধারা উপস্থাপন করেন। গ্রামসির অভিমত মার্কস-লব্ধ জ্ঞান কোনাে গোড়া মতাদর্শ নয়—তা হলাে জীবন্ত, হালনাগাদ-সম্ভব, অবিরাম নবায়নযােগ্য চিন্তা। প্রথমেই উল্লেখ করা যায়, তার দৃঢ়তা এবং মনের স্বাধীনতা। গ্রামসি মার্কসের ধারণার ‘অধিবাস’ থেকে উখিত, কিন্তু তা কোনাে আঁটো জ্যাকেটের মতাে গায়ে লেপ্টে রাখেননি, যা তার কল্পনার জগৎকে সংকীর্ণ এবং স্থবির করতে প্ররােচনা যােগাবে; বরং তা ধারণার এমন এক কাঠামাে যা তাঁর মনকে করে উদার, মুক্ত। এরপর, গামসি এমন এক প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যান, অন্যের বক্তব্য উপেক্ষা না-করেও নিজেকে রাষ্ট্রনীতিক তাত্ত্বিক হিসেবে জারি রাখতে সক্ষম হন। ‘রাজনীতি’ ধারণার প্রসারিত ভাবনা-চিন্তার গুটিকয়েক উদাহরণের মধ্যে নিঃসন্দেহে গ্রামসি একজন। তাঁর মধ্যে আমরা পাই একইসঙ্গে ‘রাজনীতির’র ছন্দ, আকার, সক্রিয় বিরােধিতা, রূপান্তরের সুনির্দিষ্ট ও বিচিত্র অবস্থিতি। এক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে তুলনীয় কমই আছে। তাঁর অগ্রসর ধারণা ‘দ্য রিলেশন অব ফোর্সের্স’, ‘প্যাসিভ বিপ্লব’, ‘ট্রান্সফরমিজম', ‘কৌশলগত সন্ধিক্ষণ’, ‘ঐতিহাসিক ব্লক’, নতুন প্রদত্ত ‘পার্টি অবশ্যম্ভাবী চিন্তার বাঁক বদলে দেয়। রাজনীতি ব্যবচ্ছেদে যেখানে অন্যান্য বিশ্লেষণ সীমায়িত সেখানে গ্রামসির ধারণা সাবলীল। তারপর জোর দেয়া যেতে পারে তাঁর অনবদ্য ‘হেজেমনি' ধারণায়, যা শ্রেণী ও সামাজিক শক্তি সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। বাস্তবিকই, তিনি ক্ষমতা সম্পর্কে খুবই প্রচলিত ভাবনা পুনর্বিবেচনায় তাগিদ দেন—বিশেষ করে আধুনিক সমাজে ক্ষমতার প্রকল্প এবং এর জটিল বিদ্যমানতার শর্তসমূহ'। জাতীয়-লােকায়ত ক্রিয়াকলাপ; ক্ষমতার মতাদর্শ, নৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং বুদ্ধিজীবীতার পরিসর; রাষ্ট্র এবং সিভিল সােসাইটির ওপর এর দ্বিগুণ গ্রন্থিলতা; কর্তৃপক্ষ, নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব এবং সম্মতির শিক্ষার মধ্যেকার আন্তঃখেলা আমাদেরকে বৃহত্তর এক ক্ষমতা পরিকল্পনায় ও আনুবিক কর্মকাণ্ডে সমন্বিত করে। গ্রামসির ক্ষমতার বহুকেন্দ্রিক পরিকল্পনা প্রচলিত সংকীর্ণ ও এককেন্দ্রিক পরিকল্পনাকে সেকেলে করে দেয়। একই ভাবে তার সাংস্কৃতিক প্রশ্ন, ভাষা ও লােকায়ত সাহিত্য এবং অবশ্যই মতাদর্শগত কাজের পরিধি নিঃসন্দেহে আমাদের চমকৃত করে।
নব্বইয়ের দশকের কথাসাহিত্যিক ফকরুল চৌধুরী। পিতা আবদুল মান্নান চৌধুরী, মাতা তফরুন বেগম। জন্ম চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকাবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। বর্তমানে সাংবাদিকতায় নিয়োজিত। গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শিল্পসমালোচনা ও সম্পাদনায় তাঁর সমান দক্ষতা। শিশুতোষ বিজ্ঞান লেখক হিসেবেও সুপরিচিত। উত্তর-ঔপনিবেশিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর বিশে কিছু কাজ ও লেখালেখি রয়েছে। সিভিল সোসাইট নিয়ে তার একটি সমৃদ্ধ সম্পাদনাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীতে লিখে থাকেন। তবে ছোটকাগজে লিখতে অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ভ্রমণ তাঁর প্রিয় শখ। নিত্যসঙ্গী বই, নেশা বই পড়া।